Showing posts with label My Life. Show all posts
Showing posts with label My Life. Show all posts

Thursday, 14 December 2017

মুখুজ্যে মহিমা: মিষ্টি মুখ ১

"আঃ, লাগছে, আর পা ছুঁড়িস না, কি হলো শুনতে পাস্ না নাকি?"

কে শুনবে? তিনি তখন স্বপ্নের জগতে। দিব্যি চার পা আকাশের দিকে তুলে মোটামুটি নিত্যানন্দ পোজে শিবনেত্র হয়ে সুপ্ত। হ্যাঁ , চারটেই পা। আমার মিষ্টি বুড়ি।

মিষ্টি আমার মেয়ে, গায়ের রংটা বেশ চাপার দিকে, কানগুলো অত্যধিক  ঝোলা, মেয়ে হয়েও গায়ে ভয়ঙ্কর বেশি লোম, সারাক্ষন জিভ বের করে থাকে, প্রচন্ড হ্যাংলা। আমরা কিছু খেলেই সামনে এসে বসে আর মুখ থেকে অনবরত নাল পড়ে। কিন্তু চোখদুটো এতো মায়াবী যে না দিয়ে থাকা যায় না। আর তারপরেই তার আনন্দ দেখে কে! ল্যাজ নেড়ে গোল গোল ঘুরতে থাকে। মিষ্টি আমার আড়াই বছরের লাসা আপসো কুকুর। অবশ্য ওকে অন্য কেউ কুকুর বললে মোটেই সহ্য করি না, বেশ একহাত নিয়ে নিই।

তা যে কথা বলছিলাম, রাত দুপুরে ঘুমের মধ্যে লাথি খেতে কার ভালো লাগে বলুন? কিন্তু আমাকে খেতে হয়, রোজ, আমার বৌকেও। কারণ মিষ্টি মাঝরাতে খাটে উঠে দুজনের মাঝে ঠেলে ঠুলে ঢুকে পড়ে, আর তারপর ঘুমের ঘোরে অদ্ভুত অদ্ভুত কান্ড করে। তার মধ্যে লাথি মারাটা খুব বেশি। ধরুন সেদিনের কথাটাই, বেশ আয়েশ করে একটা বিয়েবাড়ির স্বপ্ন দেখছিলাম, ফিসফ্ৰাই, নানপুরী আর ছোলে সাঁটিয়ে সবে পোলাও আর মাংসে হাতটা দিয়েছি, ব্যাস! কে যেন ছোঁ মেরে হাত থেকে মাংসের টুকরোটা নিয়ে হাওয়া, আর তলপেটে সজোরে একটা লাথি। কে আবার! আমার কন্যা।

খুব রাগ হলো, ঘুমের মধ্যে চোখ কচলে বেটিকে ধরে খাট থেকে নামিয়ে দিলুম। সে বেচারিরও তো কাঁচা ঘুম চটকেছে। খুব অবাক হয়ে খানিক্ষন মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর গুটি গুটি আমার পাশের দিকের মেঝেতে শুয়ে ফোঁপাতে লাগলে! সত্যি বলছি, মা ঘেঁটুকলির দিব্যি, ফোঁস ফোঁস করে সে কি কান্না! আবার তাকে তুলে এনে পাশে শোয়াই, ব্যাস, আর যায় কোথায়! আমার বালিশের উপর ঠ্যাং তুলে দিয়ে আমার শোবার জায়গাটা প্রায় পুরো দখল করে নিয়ে সোজা ঘুম। আমি আবার বেঘর।

তা এ হেন মিষ্টির একদিন ভারী সাধ হয়েছে সন্ধ্যেবেলা তিনি বাইরে হাওয়া খেতে যাবেন! প্রসঙ্গত, সেদিনের কোটা কমপ্লিট! ঘুরে আসা হয়ে গেছে, কিন্তু কেউ যদি ভুলেও ওনার সামনে "চলো" কথাটা উচ্চারণ করে, মিষ্টি পাগল হয়ে যায়। আমার সীমিত জ্ঞান অনুযায়ী, কুকুর দেড়শো থেকে দুশো শব্দ বুঝতে পারে, মানে ওই শব্দগুলি ওরা এক একটি বিশেষ কাজের সাথে জুড়ে নিজের মতো করে বোঝে। যেমন ধরুন কুকুরকে "আয়" বললে ওরা কাছে আসে, "যা" বললে পালায়, সেরকম! মিষ্টির জীবনের প্রিয়তম ও সবচেয়ে আকর্ষণীয় শব্দ হলো "চলো"। তা মিষ্টির সেদিন সন্ধ্যেবেলা আবার বাইরে যাবার ভুত মাথায় চাপলো। তাকে কিছুতেই তখন শান্ত করা যায় না! বাড়িতে যে বন্ধুরা এসেছে, তারাও ঠিক সেই সময়েই বেরোবে, মিষ্টি প্রায় তাদের জামা কাপড় কামড়ে ধরে ঝুলতে শুরু করেছে, "নিয়ে চলো না একবার প্লিজ"। আমার বন্ধুরাও অপ্রস্তুত!

এগিয়ে এলো আমার বৌ, "কোথাও যাবে না এখন, যাও টেবিলের নিচে যাও"। বাহ্ রে! কোথায় বাইরের পার্ক আর কোথায় টেবিলের তলা! কোথায় বাইরের ফেতি কুকুরগুলো আর কোথায় একটা পুরোনো সফ্টটয়! মিষ্টির বয়ে গেছে টেবিলের নিচে যেতে! সে নেচেই চলেছে, কখনো দু ঠ্যাঙে, কখনো আবার দু হাত লাফ মারছে! আমার বন্ধুরা বেরোতেই পারছে না। আমার বৌ শেষমেশ চেপে ধরলো মিষ্টিকে, ওদের যে দেরি হয়ে যাচ্ছে! কোনোমতে ওরা বেরোতেই দরজা বন্ধ করে তাকে ছাড়া হলো। আর একছুট্টে মিষ্টি বেডরুমে! আমি  বললাম,"দেখলে তো? কি রাগ করেছে!" বৌ বললো "করুক যে, সবসময় সব কথা শুনতে হবে নাকি?"

আর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না তেনার, আমরা টিভি দেখছি, সময় যাচ্ছে! এদিকে রাতের খাবারের সময় হয়ে আসছে, মিষ্টির দেখা নেই! আমি বেশ কবার ডাকলাম, সাড়া  নেই। এমনিতে সাড়া না দিলে মিষ্টিকে বিভিন্ন নামে আর বিভিন্নভাবে ডাকতে হয়, সেসবও করা হলো, তিনি আসেনই না। এবার আমার বৌয়ের সন্দেহ হয়েছে! "এরকম তো করে না", দেখে আসি একবার!"

ভিতরে গিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম, কখনো ভুলবো না। মিষ্টি খাটের উপরে জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আছে, অপলকে,ল্যাজটা  একদম নেতিয়ে ঝুলে আছে, সামনে গিয়ে দেখি, দু চোখ বেয়ে জলের ধারা! কি বলব, মুখে ভাষা জোগালো না। কথা বলল বৌ, দেখি তার চোখেও জল, "মিষ্টি চলো", সঙ্গে সঙ্গে দু'পা তুলে জিভ বের করে মিষ্টি রাজি। মানুষ আর কুকুরে সবচেয়ে বড় তফাৎ বোধ হয় এটাই, একবার আদর করে কাছে ডেকে নিলে মিষ্টি সব ভুলে আরো কাছে চলে আসে।

পরের দৃশ্য: ডিনার ভুলে আমরা কপোত কপোতী মিষ্টির সাথে দৌড়ে বেড়াচ্ছি পার্কে, মিষ্টি উর্দ্ধশ্বাসে ছুটছে একটি নেড়ি কুকুরের পিছনে, সে বেচারি ভয়ে কোথায় লুকোবে বুঝতে না পেরে কেউঁ কেউঁ শব্দ সহযোগে পলায়নরত, আর আমরা দুইজন অসহায় হয়ে চেঁচাচ্ছি "মিষ্টি, মিষ্টি, এক্ষুনি এদিকে আয়, আজ তোরই একদিন কি আমারই একদিন!"


Wednesday, 14 December 2016

হারিয়ে গেছি আমি

আজ আর সেই ঘর নেই
যে ঘরে আমি বড় হয়েছিলাম
ছোট ছোট পায়ে হাঁটতে শিখেছিলাম যে রেলিং ধরে
আজ সেই সিঁড়িগুলোও নেই
হারিয়ে গিয়েছে কত কিছুই
ছেলেবেলার যত্নে কুড়োনো খোলামকুচি
হঠাৎ আদর পাওয়া ফাটা ফুটবল
সন্ধ্যেবেলার শাঁখের আওয়াজ
ঘুমোতে যাওয়ার আগে দশটা কুড়ির খবর
রবিবারের টিভির সকাল
বছরে দুবার ছুটি ছুটি
আজ আর সেই ঘর নেই

সে বাড়ির বুক চিরে আকাশ ছোঁয়া ইমারত
বাগানগুলো হারিয়ে গেছে পার্কের দাপটে
যত্ন করে ঘাস গজানো, ছোটদের ঢেঁকি-দোলনা
আমার সেই আমগাছটা আর নেই
স্থলপদ্ম, কামিনীরাও কোথাও চলে গেছে
এখন শুধু সময় সময় জল ছিটানো হয়
কেউ গাছগুলো জড়িয়ে ভালবাসে না

আমার পাড়া হারিয়ে গেছে
চারিদিকে নতুন মানুষের ভিড়
আমার খেলার মাঠ
আমার মন খারাপের পুকুরপাড়
আমার প্রাণখোলা আকাশ
সব আজ ঢেকে গেছে উঁচু ইঁটের স্তুপে
আর এদের মাঝেই কোথাও হারিয়ে গেছে আমার ছেলেবেলা
হারিয়ে গেছি আমি
আমার অর্ধেক মানুষটা

Monday, 5 December 2016

গৃহদাহ

পোড়াতে চেয়েছো তুমি
জানো পুড়লে কেমন লাগে?
অল্প অল্প ধোঁয়া পাক খেয়ে উঠতে থাকে 
দমবন্ধ করা বাষ্প গুলিয়ে দেয় গা 
আলোগুলো ঝাপসা হয়ে যায় মুহূর্তে 
এপাশ ওপাশ থেকে লুকিয়ে থাকা পোকাগুলো বেরিয়ে আসে 
অনেক পুরোনো সোঁদা গন্ধমাখা লেপ তোষকের আগুন ধিকিধিকি 

তাপ বাড়তে থাকে তারপর 
ছাইচাপা আগুনেও শিখা জ্বলে ওঠে
উষ্ণতা দুর্বিষহ হয় বাইরে অন্তরে 
শেষ রসটুকু শুষে নেয় লেলিহান 
জ্বলতে জ্বলতে মনে হয় এক কথা 
এও তবে ভালো, যেন সব শুদ্ধ হয়ে যাওয়ার আশায় 
পোড়াতে চেয়েছো ঘর, আমি জানি আজ পুড়লে কেমন লাগে।




Thursday, 28 July 2016

আকাশের জন্য

কাল থেকে আকাশের জন্য খুব মন কেমন করছে
হৃদয় নিংড়ে নেওয়া বৃষ্টি অনেকদিন ধরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে অনুভূতি
অঝোর ধারে বয়ে যাচ্ছে স্মৃতি, সুখ, আনন্দের মুহূর্ত
অথচ আমি তো বৃষ্টিই চেয়েছিলাম।

দারুন গ্রীষ্মে ভেতরটা তখন শুকিয়ে কাঠ
মন ফুঁড়ে উঠে আসছে আর্তি, কান্নার মত আঠালো,
দু গাল বেয়ে নামছে দুঃখের ধারা, কষ্টের ব্যথাকে সঙ্গী করে
বিদ্রোহী চেতনা ঢেকে দিচ্ছে উন্মুক্ত শৈশব।

শুষ্কতা ঢেকেছে অন্তর আমার
অন্তরালে থাকা স্নেহ চাপা রয়ে গেছে
এতদিন আজ বড় কম দিন নয়
প্রলেপ কি দিতে পারে উদ্ধত রাগ !

তবু আজ মন ভারী লাগছে আবার
এতদিন পর বৃষ্টিকে দোষী লাগছে কি ?
না হলেও হতে পারে, উন্মাদ মন -
মেঘ সরিয়ে আবার আকাশকে দেখতে ইচ্ছে করছে।




Wednesday, 29 June 2016

সময়টা বড় সুখের না

সময়টা বড় সুখের না,
কাছের হাতগুলো এক এক করে দূরের দিকে পাড়ি দিচ্ছে।
অল্প পাক ধরা সাদা মাথাগুলো আজ তুলোর গাছে লীন।
অনেকদিনের না দেখা মুখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে ক্রমশ।

বয়স বাড়ছে সবার।
বাড়তে থাকা ধুলোর স্তরে ঢাকছে তরল স্মৃতি।
নিঃশ্বাসে ফুরোচ্ছে আয়ু, জলের মত।
একদিন আমিও বুড়ো হব,
শিরশিরে হাতে বয়স আবরণে ঢেকে দেবে শরীর,
অন্তহীন এই যাত্রার মাঝে কয়েকটা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সময়-
দেখে বেছে নিতে হবে,
অথবা তাদেরও দিতে হবে যেতে।

অদৃশ্য বালুরাশি কাঁচের বয়ামে বন্দি,
মুক্তি চাইছে তারাও,
অতলান্ত নীলে ডুবলে হয়ত ব্যথা বাজবে কম।
দূরের হাতছানি আজ ভাবাচ্ছে আমায় খুব।
সময়টা আজ সুখের না,
সময়টা বড় সুখের না।

Wednesday, 15 June 2016

আমার কলম

আমার কলম রিক্ত ছিল
সুপ্ত মনের ছায়া,
অন্ধ দেওয়াল বন্ধ দুয়ার
মৌন মুখর মায়া।

আমার কলম দৃপ্ত হল
তরবারির শান,
উজ্জলতার উচ্ছাসে আজ
অভ্রভেদী বান।

আমার কলম ক্ষুব্ধ দেখো,
যুদ্ধ ভরা দেশে,
মুক্তি দেবে সেই কলমই
অন্ধ রাতের শেষে।

আমার কলম বলবে যে আজ,
তীব্র তেজের ধার,
উদ্বেলিত হৃদয় জোয়ার
মানবে না আর হার।

Friday, 4 March 2016

মুখুজ্যে মহিমা: শকট সংশয়

অনেকদিন হলো পেটের মধ্যে কথাটা কিলবিল করছে। না পারছি গিলতে না পারছি বলতে। বলতে না পারার কারণ হলো চরম লজ্জা। আর গিলতে না পারার কারণটা ....... না হে, এভাবে বলা যাবে না। দাঁড়াও বাপু, তাহলে খুলেই বলি।

গাড়ি এসেছে, দু একটি বিক্ষিপ্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বাদ দিলে আমি বেশ ভালই চালাচ্ছি।ভালো মানে এই ধর বাজার করতে যাচ্ছি (অবশ্যই মলে, কারণ প্রকৃত অর্থে যাকে বাজার বলে সেখানে গাড়ি নিয়ে যাবার ধৈর্য বা সাহস কোনটিই আমার নেই), অফিসে যাচ্ছি, পাশের পাড়ায় রিহার্সাল দিতে যাচ্ছি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কথায় আছে না, খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হলো তার হেলে গরু কিনে, আমার হলো তাই।

একদিন শখ হলো পাওয়াই যাব। আসলে জায়গাটার সাথে এমনিতেই একটা পুরনো সম্পর্ক আছে, তার সাথে আবার আমার এক বন্ধু সবে পিতৃত্ব লাভ করেছে এবং তার স্ত্রী ও সদ্যোজাত শিশুপুত্র পাওয়াইয়ের একটি হাসপাতালে আছে। তা চললাম অফিসের পর, সাথে আছে দুই বন্ধু, ঝামেলা কিছু হবে না। গাড়ি চলল গড়গড়িয়ে। অফিস থেকে বেরিয়ে সদর রাস্তা ধরে তারপর যানজট পার করে খাঁড়ির সেতু পেরিয়ে মূল মুম্বাই শহরে তো পৌছে গেলাম। উফ, কি যে আত্ম-গৌরব আর ততোধিক আনন্দ সে আর কি করে বলব। আমার সাথে যে দুই বন্ধু ছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন আমার সাথেই গাড়ি শিখেছিলেন। তিনি কিন্তু এখনো এতদূর গাড়ি আনেন নি। তাই তাঁর সামনে আমি তখন বামনরূপী শ্রীবিষ্ণু। পেট থেকে তিন নম্বর পা বের করে বাকি দুই বন্ধুর মাথায় রেখে আকাশ ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু পথ তখনও বাকি ছিল।

এক্সপ্রেসওয়ে ধরে আমার গাড়ি পাওয়াই পৌছল। উঁচু নিচু ফ্লাইওভার ধরে আমার সেই প্রিয় পুরনো শহরতলি। পেটের ভেতর কবিতা গুঁতো মারবে মারবে করছে এমন সময় ঘটনাটা ঘটল। সামনে একটা গাড়ি, সাদা রং এর মারুতি সুইফট ডিজায়ার। বেশ ছুটছিল, হঠাত সিগনাল দেখে "গঁত" করে বেঁকে দাঁড়িয়ে গেল। আর আমিও টাল সামলাতে না পেরে ইংরেজি ছবির মত দিয়েছি সেটাকে ঠুকে। ব্যাস, আর যায় কোথায়!

রাস্তায় যানজট, চারিদিক থেকে ভেঁপু বাজছে, লোকজন চেঁচাচ্ছে, আর সামনে থেকে স্বয়ং যমরাজ হেঁটে আসছেন। আমি আর কি বলব, পটল দিয়ে সিঙ্গি মাছের ঝোল খাওয়া বাঙালি, হাত পাগুলো পেটের ভেতর সেঁধিয়ে যাচ্ছে। এমন মুখ্যু, যে জানালার কাঁচটা পর্যন্ত বন্ধ করি নি। যমরাজ এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। মানে জানালা দিয়ে হাত ঢোকালেন, গাড়ি থেকে চাবি খুলে নিলেন এবং অশ্রাব্য গালি দিয়ে নিজের গাড়িতে চড়ে  বসলেন। আমাদের তো মাথায় হাত। "দৌড় , দৌড়"... তাঁর কাছে গিয়ে দেখি আর এক কান্ড। তাঁর পত্নীদেবী সামান্য আহত হয়েছেন আমার ঠোক্করে, আর যমরাজ আমায় গালি দিয়েই চলেছেন। অনেক কষ্টে তাঁদের বোঝাই যে আমি শিক্ষানবিশ মাত্র, আমার কোনো উদ্দেশ্য ছিলনা তাঁর গাড়িতে ধাক্কা মারার। দেবী তবু একটু নরম, তাঁর কথাতেই আমরা চললাম নিকটস্থ হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে যাবতীয় কাজকর্ম, দেবীর তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা ইত্যাদির খরচ বহন করলাম। যমরাজ কিন্তু বকেই চলেছেন, এমনকি মাঝে মাঝে শাসাচ্ছেন যে তিনি কোনো এক বিখ্যাত দৈনিক এর সম্পাদক এবং চাইলে কালই আমার নামে কেস ঢুকে দেবেন এবং আমাকে মিডিয়া দিয়ে উত্যক্ত করে তুলবেন। আমি তো তাঁর গাড়ির ক্ষতি শুধু করিনি, তাঁর স্ত্রীর আঘাত লেগেছে, আর তাঁকে পাঁচদিন গাড়ি দোকানে রাখতে হবে, তাঁকে গাড়ি ভাড়া করে অফিস যেতে হবে, তাতেও বেজায় খরচ। তখনও বুঝিনি এ আমি কার পাল্লায় পড়েছি, যদিও বোঝা উচিত ছিল

যমরাজের পিতাশ্রী এলেন, বৌমাকে নিয়ে বাড়ি গেলেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছিল, আমি সহজ উত্তর দিলাম মুখ কাঁচুমাচু করে যে নতুন গাড়ি চালাচ্ছি তাই ব্রেকের জায়গায় এক্সেলারেটার চেপে ফেলেছি। তিনি খুবই দয়াপরবশ হয়ে বললেন, "হতেই পারে। যাক গে, বেশি কিছু হয়নি সেটাই রক্ষে।" বৌদিমনিকে যারপরনাই বিনয়ে বললাম আমায় ক্ষমা করে দিন আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য, তিনিও বললেন, "না না ঠিক আছে"। কিন্তু তারপর যা বললেন, সেটি ভয়ংকর, "আমি তো কিছু বলছি না, কিন্তু আমার স্বামী লোকটি মাথাগরম, যান, ওঁকে  শান্ত করুন"

বলে কি! শান্ত করুন মানে? উনি কি সত্যি যমরাজ নাকি তান্ডব নাচা মহাদেব!

বৌদিমনি যে ভুল বলেননি, সেটা প্রমান হল শ্বশুর আর বৌমা বাড়ি যাওয়ার পরে। যমরাজ আরেকজনকে ডেকে আনলেন, ইনি ছোট যমরাজ। বয়সে ছোট কিন্তু তেজে অনেক বড়। ইনি পাওয়াই অঞ্চলে একজন ছোটখাটো প্রোমোটার এবং এনার সবার সাথে ওঠাবসা, সে পুলিসই হোক বা গুন্ডা। কিন্তু আমরা তো তখনও সেসব জানি না। তিনি এসে দাবি করলেন "দুই পেটি দে"। ও বাবা, সে আবার কি কথা! ভর সন্ধ্যেবেলা খামোখা মাছ কিনে ওনাকে পেটিটাই দিতে যাব কেন? তিনি বুঝলেন আমরা অবোধ বালক বালিকার দল এবং সেখানেই আমাদের... বাকিটুকু উহ্য থাক

আমাদের প্রায় খামচে ধরে টেনে নিয়ে চললেন স্থানীয় থানার দিকে। আমরা বুঝলাম এরা টাকা চাইছে। পাঁচ-দশ হাজারে রফা করব, প্রায় ঠিক করে ফেলেছি আমরা নিজেদের মধ্যে। ভয়ে ভয়ে ওনাদের বলতেই হাসির রোল উঠলো। "তোরা বড় বড় কোম্পানিতে চাকরি করিস, আর পাঁচ-দশ হাজারের কথা বলছিস!" কে ওদের বোঝাবে যে বাইরে থেকে যা মনে হয়, আসল সত্যিটা তার উল্টো! লোকে যখন ভাবে আমি কুয়ালালামপুরে শপিং করছি আমি তখন আসলে কদমতলায় কচু তুলছি।

থানা যে কি বিচিত্র জায়গা, সেদিন বুঝলাম। এ দেশে  টাকার জোর ভয়ানক বস্তু। বড় এবং ছোট যমরাজ পর্যায়ক্রমে পুলিস বাবাজিদের কানে মন্ত্র দিয়ে চললেন, এবং সেটিও স্তরে স্তরে উর্ধপদাবলম্বনে। এবং আশ্চর্যের কথা হলো পুলিস বাবাজিরাও কী সুন্দর টোপটা  গিললেন। আমাকে একখানা লম্বা পাতা ধরানো হল। আমার অসাধারণ মারাঠি বিদ্যেয় তার মানে হল এরকম: "আমি অন্যায় করেছি। এবং তারপর ভীষণ মনোকষ্টে ও বিবেক দংশনে ভুগে আত্মসমর্পণ করতে এসেছি"। বোঝো কান্ড! সে আমি তো কিছুতেই সই করব না, আর তারাও ছাড়বে না। এদিকে সময় বহিয়া যায়, নদীর স্রোতের প্রায়

আমাকে বলা হল বাড়িতে ফোন করতে। আমি বললাম, সে করুন, কিন্তু যেই বাড়ির ঠিকানা শুনলো হাওড়া, দ্বিতীয়বার আর "বাবাকে বলে দেব" গোছের শাসানির উল্লেখ করলো না। বুঝলাম এইভাবে আমাকে ভয় দেখিয়ে টাকা বের করতে পারছে না। আর ঠিক তার পরেই দিল মোক্ষম দাওয়াই। একখানা অন্ধকার ঘরে আমাকে দিল পুরে, আবছা আলোয় বুঝলাম আরেকজনকে বেঁধে রাখা আছে সেখানে, চেয়ারের সাথে দড়ি দিয়ে! ভাবুন অবস্থাখানা! আমি যত চেঁচাই, তত দরজার কাছে মুখ এনে দর দস্তুর করতে থাকে। দুই লাখ  থেকে কমতে কমতে দেড়, এক পঁচিশ, এক অবধি তো এলো কিন্তু আর কমে নামতে চায় না। 

বুঝতে পারছেন? এখনো চলছে সেই অত্যাচার। বিকেলবেলায় যে দুর্ঘটনাটি শুরু হয়েছিল, সেটি এই রাত সাড়ে  দশটাতেও শেষ হয়নি। আমি সত্যি সত্যিই আর পারছি না। খিদের চোটে  আমার নাড়িভুঁড়ি হজম হবার জো, পিলের ব্যথায় চোখে অন্ধকার দেখছি, আর এই দুই যমরাজ মুদির দোকানের দর দস্তুর চালিয়েই যাচ্ছে। আমার তখন বন্ধ হয়ে আসা চোখের পেছনে একটা নরম বিছানা আর গরম গরম ভাতের ছবি নাচছে। ধেত্তেরি নিকুচি করেছে তোদের দর দস্তুর! বল, কত টাকা চাই তোদের? তোর্  দাম, তোর্  ভাইয়ের দাম, তোর্  গাড়ির ক্ষতির দাম, তোর্  পাঁচ দিনের হয়রানির দাম.... বল কত লাগবে? খুব বুঝতে পারছি যে, এই যমরাজ আসলে আমার স্বপ্নে দেখা ধর্মরাজ এর আত্মীয় নন, ইনি স্রেফ মৃত্যুদাতা, পরবর্তী ধর্মের বিচারের ধারে কাছে দিয়ে এনার যাতায়াত নেই। যে মানুষ স্ত্রীর হালকা আঘাতে পুরস্কার পাওয়ার মত অভিনয় করতে পারে, এবং ঠিক তার পরেই স্ত্রীকে বাড়ি পাঠিয়ে পুলিসকে সাথে নিয়ে আমার সাথে দর সস্তুর করতে পারে, সে আর যাই হোক, সোজা মানুষ নয়। 

আর এই দিব্যজ্ঞান লাভের পরেই আমার সংসার, জীবন, যন্ত্রণা ইত্যাদি যাবতীয় জাগতিক বিষয় থেকে মোহ শেষ হয়ে গেল (না, মানে সেই নরম বিছানা আর গরম ভাতটা  বাদে)। টাকা দিলে এই রাক্ষসদের থেকে ছাড়া পাওয়া যাবে? তো দে টাকা। পরশু বোনাস পেয়েছি না? "দেখুন দাদা, আমার কাছে এই পঁচাশিই আছে, এর বেশি নেই। নিতে হয় নিন, নাহলে আমি আর পারব না।" যেন নিমরাজি হয়েছে, এমন একটা ভাব করে বলল দাও আগে। বন্ধুদের পাঠালাম এ টি এম থেকে তুলতে, কারণ একজনের কার্ডে তো এত বেরোবে না। চোখের সামনে টাকার ভাগাভাগি হল, দেখলাম এবং জ্ঞানার্জন করলাম। আমাকে মুক্তি দেওয়া হল রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ

তারপর? তারপর আর কি? এখনো আপনারা পড়ছেন গপ্পোটা?এতক্ষণে তো মনে মনে আমাকে গালাগালি দিয়ে "বোকা" ইত্যাদি বলেছেন নিশ্চয়ই! সে বলুন, আমার দুক্ষু হবে না। শুধু একটা ব্যাপারে আমি খুশি থাকব যে, টাকার মায়া আমাকে বশ করতে পারল না আমাকে আমার সুখী গৃহকোণে ফিরে আসতে, একটা রাতের জন্যও না। এর অনেক পোস্টমর্টেম হতে পারে, অনেক ব্যাখ্যা, অনেক যুক্তি আসতে পারে, কিন্তু আমার সত্যি কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ আমি এই ঘটনাটাকেও একটা শিক্ষা ছাড়া অন্য কোনো নাম দিতে পারি না। 

পুনশ্চ: তা বলে ভাববেন না যেন যে আমি এখনো গাড়ি চালাতে শিখিনি। কি, বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা ঠিক আছে, নিজে একবার এসে পরখ করে যান। সামনের রোববার সকালবেলা কি করছেন? যাবেন নাকি একটা লং ড্রাইভে?




Tuesday, 19 January 2016

সময়

সম্পর্ক কেমন যেন কাঁচের বাসনের মত
ঠুনকো, অস্থায়ী বড় 
হালকা হাওয়ায় বা আঙুলের আলতো চাপে ভঙ্গুর 
সময়ের সমীকরণে বদলে বদলে যায় 
এদিকের ঘুঁটি ওদিকের হাতের বাধ্য হয়
মাত্সর্য বিষে জ্বলে যায় মনের শরীর 
গর্জে ওঠা হুঙ্কারে ঢাকে অবচেতনের কান্না 
প্রতিবাদে প্রতিরোধে মুহূর্তে চুরমার 
জেগে ওঠা ব্যথা ধীরে শীতলের পথ ধরে 
স্মৃতি ফিরে আসে তারপর 
থেকে থেকে ডাক দিয়ে যায় 
বিদায়ী সময় চায় একটু আবেগ
ভাঙা কাঁচ জোড়া লাগে সময়ের টানে।


Monday, 12 October 2015

পুজোয় বাড়ি

আমার বাড়ি কলকাতা নয়,
শিবপুর আমার বাড়ি,
হাওড়া স্টেশন নাম শুনেছ?
ঠিক পাশেতে তারই।

পাঁচশো বছর বটগাছটার
শহর তারও বেশি,
বিদেশ বিভুঁই  ছুঁয়ে এসেও
মনটা ভীষণ  দেশী।

ওপার থেকে ডাকলে যেমন
এইপারে যায় শোনা,
রাতের আলোয় সেতু দুখান
রেশম দিয়ে বোনা।

গঙ্গা যেমন ওদিক দিয়ে
হাওয়ায় টানে মন,
এপার দিয়েও বইতে থাকে,
দুই তীরে বন্ধন।

উত্তরে সেই মোহনবাগান,
এই পারেতেও তাই,
কালীঘাট আর ভবানীপুরের
যমজ যেন ভাই।

কোথাও কোনো অমিল তো নেই,
আত্মাদুটোও সেই,
শহরভাগের তর্জমা তাই
এসবখানে নেই।

শহর দিয়ে যায় না চেনা
কার যে কোথায় ঘর,
কার যে কোথায় হারিয়ে পাওয়া,
টুকরো বার-অন্দর।

পুজো আসে, মাতিয়ে আসে,
ভরিয়ে দিয়ে বুক,
প্রবাস থেকে দৌড়ে এসে
বাড়িই আমার সুখ।

বাড়ি শুধু বাড়ি তো নয়,
মনের কোনের বাসা,
বাড়ি আমার অনেক বেশি
আবেগ দিয়ে ঠাসা।

পুজোর জোয়ার জাগলে মনে
বাড়ির কথা আসে,
বাড়ির ছায়া ভাসতে থাকে
নিঃশ্বাসে প্রঃশ্বাসে।

বাড়ির কোনো দেশ হয় না,
হয় না কোনো রাজ্য
এসব আমরা বানাই কারণ
মানুষ যে বিভাজ্য।

বাড়ি আমার, বাড়ি তোমার,
পুজোয় বাড়ি যাওয়া,
অনেক কমের বিনিময়ে
অনেকখানি পাওয়া।

পুজোর টানে গা ভাসিয়ে
দিই যখনি পাড়ি,
যেইখানেতে বাংলা শুনি
সেইখানে মোর বাড়ি।



Wednesday, 5 June 2013

দুই হুজুর- একটি দর্পণ প্রযোজনা

চতুর্দিকে দুর্নীতি আজ উঠছে ভরে দেশে,
পাল্লা দিয়ে কাল রাত্রি শোণিত বেয়ে ছোটে,
ব্যথায় যখন পিঠ ঠেকে যায় দেয়াল পানে এসে,
অন্ধ মনের অন্ধকারে বিবেক জেগে ওঠে।




দুই হুজুর সেই বিবেক জাগানোর গল্প।  দুই বিবেকহীন, কুচক্রী, স্বার্থান্বেষী, অলস, ক্ষমতাপ্রিয়, অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন দেশ শাসকের শাস্তির মাধ্যমে বিবেক জাগ্রত হয়, প্রতিষ্ঠা পায় জনমানসে। যদিও রূপক এবং স্বপ্ন কল্পের সাহায্যে ওই দুই "হুজুর" প্রত্যক্ষ করেন সমাজের চরম প্রতিবাদ, তবু দর্শক স্বাদ পান রুখে দাঁড়ানোর মানসিকতার। আর সেখানেই এই নাটকটির সার্থকতা।




















একজন পুলিশ, আরেকজন দেশনেতা। সারাজীবন জুড়ে ওদের অবদান কিছু নেই সমাজের প্রতি। নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিল ওরা। তাই অবসর নেওয়ার পর ওদের আর সময় কাটতে চায় না, মন শুধু নিশপিশ করে কি করে আবার শাসন হাতে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। সময় কাটে পুরনো স্মৃতি খুঁড়ে আর দেশের বর্তমান ব্যবস্থার ত্রুটি ধরে। একদিন ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় ওদের অতি পরিচিত এক ফেরিওয়ালা, এক নতুন অবতারে। সে ওই দুই হুজুরকে পৌঁছে দেয় এক নির্জন দ্বীপে, এক অজানা ম্যাজিকের বলে। যে দ্বীপে নেই কোনো স্বার্থান্বেষী শাসক, নেই কোনো আত্মলোভী পুলিশ। যেখানে আছে সাম্যবাদ, আছে আনন্দ, আছে মুক্তি। কষ্টও আছে, কিন্তু দ্বীপবাসীরা হাতে হাত রেখে সে যন্ত্রণার মোকাবিলা করে। দুই হুজুর সেই দ্বীপে খুঁজে পায় আরেক ভারতবর্ষকে, যে ভারতে কোনো রাজনীতি নেই, আছে শুধু সোনার ফসল, আছে সম্পদ, মানব-সম্পদ, খাঁটি সোনার মতই উজ্জ্বল। হুজুরদের লোভ হয়, চোখে ঝলসে ওঠে লালসা।















ফাঁদ পাতে তারা, ধরা পরে এক সাধারণ দ্বীপবাসী, তার মনে রোপন করে লোভ আর স্বার্থপরতার বিষ। সে পাপ করে। ধরা পরে, আর ছিঁড়ে যায় শহরবাসী হুজুরদের মুখোশগুলো। দ্বীপবাসীরা রুখে দাঁড়ায়। না, এই সোনার মাটিকে তারা বিষের কালো জলে ভিজতে দেবে না। সাবধান হয় তারা। কিন্তু তারই মধ্যে আসে চরম অভিঘাত, বিষের জ্বালায় তাদের সাথীটি আত্মহত্যা করে। আর তাতেই ফুঁসে ওঠে তারা। বিদ্রোহ ঘোষণা করে, দুই হুজুরকে নির্বাসিত করা হয় দ্বীপ থেকে।


















স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে হুজুর দুজন ফিরে আসে বাস্তবের মাটিতে, যে মাটিকে তারা চেনে, শাসন করে, শোষণ করে। খুশি হয়ে ওঠে তারা, আনন্দ পায় প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছে বলে, আর নিশ্চিন্ত হয় এই ভেবে যে, এই মাটি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে না। তারা বছর বছর আরো শুষে যাবে এই দেশের রক্ত, মাংস, অস্থিমজ্জার শেষ বিন্দুটুকু পর্যন্ত তারা চেটে নেবে চরম আশ্লেষে।


















সত্যি, এই আমাদের দেশ। আমরা কি পারি না ওই দ্বীপবাসীদের মত রুখে দাঁড়াতে? আমরা কি পারি না চিত্কার করে বলতে- "ওই সুমুদ্দুরির বুকে ঠাই লও গ সইভ্য বাবুরা"? জানি না। হয়ত পারি, হয়ত না। কিন্তু চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি? আর সেই চেতনাই যাতে জাগ্রত হয় সবার মধ্যে, তাই সমাজের এই প্রতিচ্ছবিকে দর্পণ মঞ্চে তুলে ধরল "দুই হুজুর" নাটকটির মাধ্যমে। আশা রইলো আপনারা ভালবাসবেন, আপন করে নেবেন দর্পণের এই প্রয়াসকে।


















দর্পণ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: darpan-vashi.webs.com

চিত্র সৌজন্য: প্রীতম চক্রবর্তী, রুদ্রনাথ মুখার্জী (http://rudraznotepad.blogspot.in/), পুনিত দুবে (http://www.punitdubey.in/)

Friday, 17 May 2013

ভোর


কোথাও দূরে যাচ্ছিলাম
অনেকটা দূর জায়গাটা
দেশ থেকে বিদেশে খানিক
অপেক্ষার পর আবার যেতে হবে।

অপেক্ষার সারি অতি দীর্ঘ,
ধীরে ধীরে কচ্ছপের মত চলে,
গায়ে হাত দেয় বিদেশী পুলিশ
সন্দেহে তাকায় মুখের পানে।

লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম স্মৃতি,
তাকেও আটকাবে সে?
বহুদূরে থাকে যে মানুষ,
কতটুকু বাকি তার থাকে?

সেটুকুও কেড়ে নিলে ফের
আরো দূরে যেতে হবে আজ
নিজেকে আবিষ্কার করি
প্রেয়সীর শহরের মাঝে।

হারিয়ে গিয়েছে বন্দর,
হারিয়েছে বিদেশী পুলিশ,
পুরোনো ধুলোয় এক বাড়ি
মাথা তুলে আছে মাঠের মাঝে।

নীচে তার সশস্ত্র প্রহরী
বাধা দেয় উপরে যেতে,
আমার সাথের সঙ্গীরা
ফিরতে চায় নিজেদের ঘরে।

বাতিল হয়েছে উড়ান
কাল ফেরা যাবে না শহরে,
এখনই ফিরতে হবে তাই
প্রেয়সীও জানলো না কেন।

ডাক দিই একবার তাকে,
যদি শুনে নেমে আসে সে,
আধোঘুমে হারায় সে ডাক
আমি যাই, যাই শুধু ফিরে।

তবু দূরে যেতে যেতে দেখি,
মই বেয়ে নামে তাড়াতাড়ি
পাগলিনী আলুথালু বেশে
খুঁজছে শুধুই আমায়।

Wednesday, 7 November 2012

Assorted Overflowing Emotions

To be an adult, is to be alone
~ Epictetus

All of our reasoning ends in surrender to feeling.

~Blaise Pascal

Continuous effort - not strength or intelligence - is the key to unlocking our potential.

~Winston Churchill

Loneliness

Missing Question

Play House

Love

Challenging Speeds: Vodafone Speed Fest, 2012, Mumbai

Whenever F1 comes to my mind, I tell myself, "it's not my cup of tea" and just avoid it. I don't know the details of the game, not any rule, not even the big shots of it, except Michael SchumacherNarain Karthikeyan or Karun Chandhok (later two for being Indians). Last year when the nation was mad about its first grand prix, I was not aware of popular drivers other than these three gentlemen.

And now here I am, at Vodafone Speed Fest, 2012... where most of the guys (and galz too) have come to witness sheer excellence of Mr. Lewis Hamilton. Truly speaking I never heard of him (and that's best describes my poor knowledge) before the announcement by Indiblogger of hosting a bloggers' meet in association with Vodafone to celebrate Vodafone Speed Fest, 2012. As usually I googled and found he is one of the best drivers in F1 circuit of present time. I was amazed and logged in into Indiblogger site to register for the event. But what have I found! "No seats left". I called Punit, my blogger friend (who introduced me into this blogging world, I know he is highly irritated by now as I keep on telling this, but I will do it in future also!) and he told me he couldn't register as well. Phew!!

The next day when I was preparing for a party (one of our friend was leaving Mumbai, so it was sort of a farewell party), Punit called me. I was little hesitant when he asked me where am I. I told I cannot get out now as there is a party. Punit, more irritated by my words, expressed a mock anger.. "abey, ghar baithe hi yeh kaam hoga" ("Hey, you can do it sitting at home what I will ask you to do now"). And then he told me to register quickly as Indiblogger team has increased the seat number to 300. Wow... I signed in right then and registered. Punit did it as well.

And then THE SUNDAY came. It was a sunny morning and we had to reach The Grand Hyatt (near Mumbai University) before 12. This time Indiblogger team has taken confirmation from everybody as the event was hugely sought after by every Mumbaikar. We reached the hotel by 11:30 and entered the lobby. The preparations were still going on and Vinit (Indiblogger Teammate) asked us to wait for sometime. We were more than happy clicking pics at the lobby with a model of an F1 driver and THE McLAREN MERCEDES.

The Replica of the Dream Car and a statue of The Driver

Then the time came to start the meet. It again started with the  "Hurr Hurr Hurr" tradition of Indiblogger and welcomed the Vodafone delegate to deliver a short speech. Other than some tricky questions about the performance of Vodafone and its customer care in Mumbai, the session went quite well. Kudos to the Vodafone representative (apologies, I forgot his name) for keeping his cool throughout the conversation. Then the regular "30 Seconds of Fame" by Indiblogger, this time also I was preparing something, but the chance never came. I am sure Punit will be agree with me! But Punit at least won two Pen Drives (awesome in looks, resembling the Vodafone Logo) and he gifted me one. Thank you Punit.

The youngest Indiblogger present in the meet



Punit talking to a fellow Indiblogger
Another Indiblogger  
                                 
It was lunch time at around 2:00 in the afternoon, the lunch was lavish as usual and we enjoyed it a lot. I met Chirag and Venkat once again after the last Indiblooger meet at Taj.

Chirag
Venkat








         

After the lunch we entered the ball room and Mr Hamilton came to the stage. The entire ball room cheered with applause. Every eye was shining, every lip was smiling, every voice was cheering. Mr. Hamilton took a deep breath and opened his mouth: "Namaste Mumbai". Claps filled the room. Then the firing of questions started towards Mr. Racer. He answered all the questions including the silliest ones. And then the moment came when we were asked to leave for the long awaited event. We will witness the world famous tricks from Mr. Lewis Hamilton!! We left for BKC (Bandra Kurla Complex) at around 4:00 and then started another long wait for the event. Thanks to Indiblogger, we got to manage the best VIP seats with gears like a poncho, ear plugs, balloons etc. Bored with the wait I started clicking faces around me. It was really awesome to see the world and its people through the lenses which is generally not that exciting when we watch them with naked eyes. I shot a kid with great enthusiasm, a guy little bored, a girl visibly excited, another girl merged in thinking, a celebrity photographer tired of the day long event.

                                                





Around 7:00 PM the event started. It was a carnival kind of thing organised by Vodafone Speed Fest. There were balloons and colors and fireworks and clowns and men with long false legs and what not!! I just cannot describe the gala moving fanfare. It will dim the light and wipe out the colors from my mind if I try to pen down. After that a huge van with Vodafone ZooZoo and the hosts for the night Manish Paul and Mandira Bedi came to cheer the people. They announced the arrival of Mr Chief Minister and other ministers from the state cabinet. They formally declared the event to begin. And then we heard the noise, a disturbing sound which turned out to be the sound from the car we were there for. The sound got closer and louder, exceeding the cacophony and then we realized He just crossed us. A few seconds of instant numbness filled me, what was that! My ears are paining, a buzzing was there which is now an African Drum inside my chest, my eyes are searching for the car  to cross us again. And it did happen. It was at least 4-5 laps he did in front of the enormous crowd. It was just amazing, one of the best never-seen-before experience in my life.

Vodafone mascot ZooZoo

Mr. Lewis Hamilton in action

Filled with excitement, joy and delight we started our journey to come back home. On the way back I was in a state of numbness, I could not talk much. And slowly I liked the game. Upon coming back to home, I had to share the experiences, pictures I clicked etc etc. but I was thinking of Mr Hamilton and other racers who can do it, challenging the speed of the air, probably the speed of the mind to intrude into thousands of hearts in exchange of such a dangerous, life-threatening task.

P.S.: I watched the Singapore Grand Prix on television the next Sunday converted into a racing lover. 

Wednesday, 29 August 2012

মুখুজ্যে মহিমা: শকট সংবাদ

আবার একটা কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে অনেকদিন ধরে, বাংলাতে। কিন্তু রম্যরচনা জিনিসটা এতই কঠিন যে দুম করে একটা লিখে ফেলব তার জো নেই।দেখো বাপু, হাসব না, লিখব, কিন্তু লোকে হাসবে পড়তে পড়তে। অনেকটা সেই হাসির নাটকে অভিনয় করার মত।ইস্কুলে ওরকম কত হয়েছে। রিহার্সাল দিয়ে দিয়ে সবাইকে উত্যক্ত করে করে যেদিন আসল অভিনয়, সেদিন মঞ্চে উঠে ডায়ালগ বেরোনোর জায়গায় বেরোচ্ছে এতদিনের লুকিয়ে রাখা হাসি। কি বিশ্রী ব্যাপার। কিন্তু মাথায় তো কিছু একটা আসতে হবে, তবে না লিখব। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই ঔপন্যাসিকরা কিভাবে এত লেখে বল তো! একটা কিছু ভেবে (অথবা না ভেবেও) সেটাকে ঘেনিয়ে পেনিয়ে দীর্ঘায়িত করতেই থাকে। ক্লান্তি ব্যাপারটা যেন পাঠকের থাকতে নেই। হাতে গোনা গুটি কয়েকজন আছেন যাঁদের লেখা ধরলে ছাড়া যায় না। কিন্তু নিজেকে সে জায়গায় ভাবতে শুধু ভয় না, সন্দেহ হয়!

যাক সে সব কথা।আজ একটা নিজের গপ্প বলি। হঠাত একদিন ইছে হল গাড়ি কিনব। বাইক ব্যাপারটা আমার দ্বারা হবে না, সেটা আগেই বুঝেছিলাম। তাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ চারচাকাটাই মনে ধরল। কিন্তু কি গাড়ি? ওরে বাবা, সে এক কঠিন অভিজ্ঞতা।আমার চার পাশের লোকজন গাড়ি নিয়ে যে এত জানে, সেটা সেদিনই প্রথম জানলাম।অনেকের অনেক  মতামত, উপদেশ ইত্যাদির ধাক্কা সামলিয়ে নিজের পছন্দ মত একটা ছোট গাড়ির অর্ডার দিলাম। তারপর অপেক্ষা, দীর্ঘ অপেক্ষা। যেন শ্রীরাধিকা পোড়ামুখ কানাইয়ের জন্য রাত জেগে বসে আছেন। সে আর আসে না। বন্ধু বান্ধব শুধোয়, পাড়া পড়শী জিজ্ঞাসা করে, আমি শুধু হাসি। আসবে, সে আসবেই। তারপর একদিন এলো। গাড়ি নয়, খবর। "আপনার পছন্দ মত রং নেই স্যার। লাল চলবে?" আর চলবে! তখন রাধিকার প্রাণ ফাটে ফাটে অবস্থা, "চলবে", বলে দিলাম। তারপর সে সত্যিই এলো।



টুকটুকে ছোট্ট লাল গাড়িটাকে দেখে সত্যি দারুন আনন্দ হল। ইতিমধ্যে আমি গাড়ি শেখার ইস্কুলে ভর্তি হয়েছি এবং প্রাত্যহিক জীবন শুরু করেছি শিক্ষকের সুমধুর কটুক্তি শুনে। এরকমও শুনেছি যে আমার দ্বারা কোনদিনও গাড়ি চালানোটা হবে না, অযাচিত সাচ্ছল্য এবং সময়ের প্রাচুর্যের কারণেই আমি গাড়ি শিখছি। যাই হোক, এ সমস্ত অর্বাচীন কথাতে কর্ণপাত না করে আমি অসীম ধৈর্যের সাথে গাড়ি চালানো শিখেছি।গাড়ি এলে তাকে পুজো করাতে হয়। একে তাকে ধরে তেলটা  ভরিয়ে আনলাম।কিন্তু পুজো করাতে কে নিয়ে যাবে? শিক্ষক বলেছিলেন শুরু শুরুতে রাতে একদম বেরোবেন না।আগে কনফিডেন্স আসতে দিন। তাই চেনা দু-একজন বন্ধুকে চেষ্টা করলাম। একজনকে পাওয়া গেল। মন্দির যাওয়া হল, পুজো দেওয়া হল। বাড়ির কাছেই এক কালী মন্দির। বাঙালি যেখানেই যায়, একটা দুর্গাপুজো, একটা কালিবাড়ি আর একটা নাটকের দল বানায়। তাই এ পরবাসে কালী মন্দির খুব একটা বিচিত্র নয়, বরং বলা যেতে পারে বেশ সহজলভ্য।চোখ পিটপিট করতে করতে মাকে অনেকবার বললাম "দেখো মা, রক্ষে কোরো।" মা বোধ হয় সেদিন একটু বেশি ব্যস্ত ছিলেন। মন্দিরে প্রচুর লোক তো, রাম নবমী বলে কথা।

পরদিন সকালে ঘুমটা ভাঙ্গলো বেশ তাড়াতাড়ি। উসখুস করছি সকাল থেকে উঠে। একটা কিরকম বদহজমের ভাব। নিশপিশ করছে আঙ্গুলগুলো। অনেক বোঝাবার চেষ্টা করলাম, কাল তেল ভরা হয়ে গেছে, কোথাও যাবার নেই, মেলা কাজ আছে ঘরে। তবু কিসের একটা অদৃশ্য টান টেনে নিয়ে চলল গ্রাউন্ড ফ্লোরের দিকে।চাবিটা ঘুরিয়ে দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে তবে একটা ঢেকুর উঠলো। বেশ লাগছে।যাব নাকি গেটের বাইরে? এখন তো রাস্তায় ভিড় নেই। আসতে আসতে চালালে মনে হয় না কোনো বিপদ হবে। আর চিন্তাই সর্বনাশের মূল।

গেট থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রাজকীয় হস্তিসদৃশ দুলকি চালে আমার গাড়ি শহর প্রদক্ষিণে বেরোলো।বাড়ি থেকে বেরিয়েই বাঁদিকে যেতে হবে বড় রাস্তাতে যেতে হলে। প্রানপনে স্টিয়ারিং ঘোরালাম, গাড়ি ঘুরল বাঁই করে। অতি বোদ্ধার মত মনে পড়ল একে বলে পাওয়ার স্টিয়ারিং। পাওয়ার বটে! ধীরে ধীরে পা গুনতে গুনতে বড় রাস্তা এগিয়ে আসতে লাগলো, আর একটু একটু করে আমার কনফিডেন্স এর পারদ চড়তে থাকলো। হেঃ! কে বলে আমি গাড়ি চালাতে পারব না? হর্ন বাজিয়ে গাড়ি বড় রাস্তাতে পড়ে বাঁদিকে চললো। একি, এরকম তো হবার কথা নয়। এত গাড়ি কেন রাস্তাতে আজ? বুঝতে পারছি নিজের হাতে স্টিয়ারিং থাকলে রাস্তাটাকে মেলার মত লাগে।কচ্ছপের মত চলছি, পাশ দিয়ে একটা গাড়ি বেরিয়ে গেল হুশ করে। যাবার সময় কি যেন একটা বলেও গেল। বলুক গে যাক, আমার শুনে কাজ নেই। নিজের মত চললেই হল। আবার একটা মোড়। স্টিয়ারিং ঘোরানো যে এত কঠিন কাজ তা জানতাম না। ওদিক থেকে একটা অটো দুরন্ত বেগে এগিয়ে আসছে।আমি বাঁদিকে যাবার চেষ্টা করছি। অটোটা কি বেআদপ, এগিয়েই আসছে। হঠাত ব্রেক কষলো। আমি কিন্তু পারিনি। প্রমাদ গুনতে গুনতে দেখলাম সিনেমাতে দেখা স্লো মোশনের মত আমার গাড়ি অটোটাকে হালকা ছুঁয়ে দিয়ে  দু-এক পা গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ল। থামতে আমি চাইনি, কিন্তু তবু থেমে গেছি, আর কিছুতেই স্টার্ট দিতে পারছি না। এদিকে  অটোওয়ালা ছুটে এসেছে, তার সাথে তার কয়েকজন সঙ্গী। বিশ্রী ব্যাপার। হম্বি তম্বি করছে। আমার মনে হচ্ছে, এদের টাকা চাই। আর সত্যি কথা হল ঠিক তাই ই। আমার চালক হিসাবে অক্ষমতা, পিতার উদাসীনতা, সম্পদের প্রাচুর্য, মানুষের জীবনের দাম সম্পর্কে আমার অবহেলা ইত্যাদি গম্ভীর বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর উক্ত অটোওয়ালা এবং তার সঙ্গীরা পাঁচশো টাকা জরিমানা ধার্য করলেন। অনেক অনুনয়, নতুন গাড়ির দোহাই দিয়ে শেষমেশ দুশো টাকাতে রাজি হলেন তারা। হাত কাঁপছে, স্টিয়ারিং ধরব কি! এবার ফেরার পালা। শিরদাড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইছে, কোনমতে টেনেটুনে বাড়ি ফিরছি। কত কি যে ভাবছি, গেট এসে গেল। যাক, অনেকটা নিশ্চিন্ত।

কিন্তু ভোগান্তি তখনও বাকি ছিল। নিশ্চিন্ত হয়ে দিলাম গাড়ি মেজাজে গেটের ভেতর ঢুকিয়ে। মর মর করে আওয়াজ। ওয়াচম্যানের সাইকেল। গেটের পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখা ছিল, দিয়েছি একদম পাড়িয়ে। সে বেচারা কার্টুনে দেখানো  পাড়িয়ে যাওয়া পাঁপড় হয়ে গেছে। অতঃকিম! আরো পাঁচশো টাকা দক্ষিনা দান। সাইকেলের মেরামতির বিস্তর ঝামেলা সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং অবশেষে নিস্তার। লিফটে উঠতে গিয়ে মনে মনে বললাম, "মুখুজ্যে, তোমার আর গাড়ি চালানো হল না।"  

Thursday, 10 March 2011

Mukti


                                                                           

Tuesday, 30 November 2010

It was she...Part-VI

The July has passed. We hardly met each other. No, it was not only due the heavy rains which was the record monsoon that year in Kolkata, but also various unavoidable circumstances. Been it my casual approach, or her idiotic apprehensions, we fought a lot that month, over phone, over chat and through networking sites (Orkut was gaining its popularity that time). And like every fighting couple, we wondered why we had ever started this relationship. Hey, hey, wait…….. was it a relationship at all? I mean till that time was it there?
I cannot answer it now. What was there, what made us to fight in every conversation, I really cannot recollect. But we fought and fought like cats and dogs caught up in the same cage. Anyway, let me arrange my memories once again.
After the then endless fight, we stopped calling each other, I mean I wanted to call, but something deep inside me restricted to dial her number. Why are you acting like a child? She’s not bothered at all, then why are you thinking of her? And I controlled my emotions. And then I mourned.
A day, most probably in first week of August, Ishani called me. It was just seven o’clock in the morning, and I was sleeping very tight. Twice I rejected her calls, but for the third time I didn’t.
“What’s wrong with you Ishani? Why are you calling me now? Am sleeping, bye.”
“Hold on, Soham. It’s me.” The very known voice I wanted to hear for a long appeared on the other side. I couldn’t answer her.
“Hello, are you there? Soham? You there?” She asked me twice.
“Yes, I am. Tell me, what do you want?” Shit, shit shit!! What am I saying!! I didn’t want to answer her in such a fashion, but my ignorance has already risen before I could leave the bed.
“Oh, are you still angry with me?” Her voice was shaking.
“Yeah, a li’l bit.” I couldn’t find out where from these words were coming out, but I was happy that she was behaving differently.
“I am sorry. I didn’t want to hurt you. I know I always fight with you for each and everything. It’s not fair, not at all for a relationship. But trust me, I never thought of losing you.”
What is she saying!! When did I tell her that am leaving her, or so!!
“Not an issue dear. I am not going anywhere.” Finally I could speak my mind.
“Promise me, you won’t fight. Always you will be nice to me. Please don’t stop talking, I cannot take it.”
“When did I stop talking to you? It was you who stopped everything. And I never started any arguments.”
“Please Soham, you know you always do such things, which I cannot take for granted. And never talk to me like that.” She was getting her usual temper back.
“See, you already have started it.” I laughed.
She smiled, I could sense it. “No, I am not. I am just trying to fix it.”
“Why are you calling from Ishani’s mobile?”
“I lost mine.”
“How?”
“I banged it on the floors the day I last spoke to you, precisely fought with you.” She chuckled.
“See, how costly is your fightings and all. Don’t do that again.”
“I won’t, but you have to be much more responsible for it.”
“I will be. Anyways, are you coming to college today?”
“Sure. I will come with Ishani. I am at her place.”
“Okay, 9:45, canteen.”
“Done. And listen…I love you.”
“It’s okay.”
“Okay? Say it.”
“What?”
“That you do.”
“I do…what?”
“Forget it.” She hung the phone up. I enjoyed her anger after a long period of time. I couldn’t express how badly I missed her, how eager I was to her from her side, how much I was longing for. But she expressed her everything. And that made my day. I left my bed and rushed to bathroom. Mom was visibly astonished to watch her son brushing at 7:30 in the morning.
“Is there anything special today?” Mom asked.
“Nothing, today I have a special class at 9:45. Please make my breakfast fast.”
She just nodded and entered kitchen.
“And Maa…..”
“Yes….dear?”
“I love you.”

Tuesday, 21 September 2010

আপনার প্রতি

সেদিনটা আজও মনে আছে,
তখনও ভাল করে বুদ্ধি হয়নি,
আপনার নাম করে মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “কে উনি?”


মা বলেছিলেন,ঠাকুর


হাজার হাজার হিন্দু দেব দেবীদের মধ্যে থেকে আলাদা করতে পারিনি আপনাকে
ভেবেছিলাম আপনিও তাদের একজন
তাইতো প্রথম পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়,
ঠাকুমার উপদেশ মত সব ঠাকুরের ছবিতে প্রনাম করেছিলাম,
আপনার ছবিটাকেও বাদ দিইনি
ধূপ জ্বেলে, ফুল দিয়ে জোড় হাতে চোখ বন্ধ করে কত কী বলেছিলাম
অবুঝ মনের সে অবোধ প্রার্থনা আজ আর মনে পড়ে না
তখনও পট আর ফোটোর মধ্যে পার্থক্য করতে শিখিনি,
তাই অনায়াসে সবাইকে বলেছি, তোদের কারুর ঘরে যা নেই, আমার ঘরে সেই ঠাকুর আছে
অনেকে হেসেছে, বুঝিনি কেন!
আজও বুঝি না


ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় উৎসব হত, বছরের দুটো নির্দিষ্ট দিনে;
আপনার ছবি রেখে সে উৎসবে নাচ হত, গান হত, আবৃত্তি, নাটক, কত কী!
মনে হত কী ভাল, আপনাকে ভাল লাগার আরেকটা কারন বোধ হয় সেটা
কবে যে মনে মনে ভালবেসেছি, জানি না
মা যখন অনুমতি দিলেন, কিছু বড় হওয়ার পর,
আমিও যোগ দিতাম সেই উৎসবে, উঃ কী রোমাঞ্চ
পরে, অনেক পরে জানলাম, আপনি মানুষ, আমদেরই মত
আপনারও জীবন ছিল, ভাই ছিল, মা ছিল, আমদেরই মত
ভীষণ অবাক লেগেছিল সেদিন,
কিন্তু বিশ্বাস করুন, এক মুহুর্তের জন্যও আপনাকে সিংহাসন থেকে সরাতে পারিনি
মনে হত আপনি সত্যিই লৌকিক নন, আপনি দেবপ্রাণ


আমার ঠাকুর্দার অন্যত্র প্রেম ছিল,
ঠাকুমা সুখ পান নি কখনও
কষ্টের সাথে নিজের ভাগ্যকে বেঁধে ফেলেছিলেন বেশ শক্তভাবেই
বাবা চাকরি পেতে সে বাঁধন কিছুটা শিথিল হয়েছিল
কিন্তু বাবার বদলির চাকরি,
ঠাকুমা আবার একা,
অন্তরে বাইরে
বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ত, আর-
ঠাকুমা সেদিকে চেয়ে বসে থাকতেন,
আমি তাঁর কোলে বসা
ঠাকুমা গাইতেন – “দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না
গাইতেন আর তাঁর মনের মেঘ চোখ বেয়ে নেমে আসত বর্ষার সাথে,
অবিরল


সেদিনও প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছিল,
আষাঢ়ের সন্ধ্যায় বাবা এলেন,
স্তব্ধ, নিঃশব্দ
কয়েক ঘন্টা আগেই ঠাকুমা চলে গেছেন-
দেখা হয়নি
শবযাত্রীর দল যখন কীর্তনীয়াদের নিয়ে হরিধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছিল-
আমার গা পুড়ে যাচ্ছিল জ্বরে,
আমার জমাট বাঁধা বুক ফাটিয়ে উঠে আসছিল সেই গানটাই-
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না…”
কত দিন চলে গেছে,
তারপর কত ঘটনার ধূলিজালে ঢাকা পরে গেছে সংসার
তবু ঠাকুমার কথায়, গানে আজও আপনি মনে আসেন
আপনার ব্যক্তিত্বের চ্ছটায়, আপনার অমলীন সৌন্দর্যে
আজ আমি আবৃত
তাই আপনাকে আমার বিনম্র নমস্কার,
আপনি গ্রহন করুন,
আপনি আশ্রয় দিন আমায়, আপনার বিমূর্ত ব্যঞ্জনায়,
রবীন্দ্রনাথ