চতুর্দিকে দুর্নীতি আজ উঠছে ভরে দেশে,
দুই হুজুর সেই বিবেক জাগানোর গল্প। দুই বিবেকহীন, কুচক্রী, স্বার্থান্বেষী, অলস, ক্ষমতাপ্রিয়, অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন দেশ শাসকের শাস্তির মাধ্যমে বিবেক জাগ্রত হয়, প্রতিষ্ঠা পায় জনমানসে। যদিও রূপক এবং স্বপ্ন কল্পের সাহায্যে ওই দুই "হুজুর" প্রত্যক্ষ করেন সমাজের চরম প্রতিবাদ, তবু দর্শক স্বাদ পান রুখে দাঁড়ানোর মানসিকতার। আর সেখানেই এই নাটকটির সার্থকতা।
একজন পুলিশ, আরেকজন দেশনেতা। সারাজীবন জুড়ে ওদের অবদান কিছু নেই সমাজের প্রতি। নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিল ওরা। তাই অবসর নেওয়ার পর ওদের আর সময় কাটতে চায় না, মন শুধু নিশপিশ করে কি করে আবার শাসন হাতে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। সময় কাটে পুরনো স্মৃতি খুঁড়ে আর দেশের বর্তমান ব্যবস্থার ত্রুটি ধরে। একদিন ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় ওদের অতি পরিচিত এক ফেরিওয়ালা, এক নতুন অবতারে। সে ওই দুই হুজুরকে পৌঁছে দেয় এক নির্জন দ্বীপে, এক অজানা ম্যাজিকের বলে। যে দ্বীপে নেই কোনো স্বার্থান্বেষী শাসক, নেই কোনো আত্মলোভী পুলিশ। যেখানে আছে সাম্যবাদ, আছে আনন্দ, আছে মুক্তি। কষ্টও আছে, কিন্তু দ্বীপবাসীরা হাতে হাত রেখে সে যন্ত্রণার মোকাবিলা করে। দুই হুজুর সেই দ্বীপে খুঁজে পায় আরেক ভারতবর্ষকে, যে ভারতে কোনো রাজনীতি নেই, আছে শুধু সোনার ফসল, আছে সম্পদ, মানব-সম্পদ, খাঁটি সোনার মতই উজ্জ্বল। হুজুরদের লোভ হয়, চোখে ঝলসে ওঠে লালসা।
ফাঁদ পাতে তারা, ধরা পরে এক সাধারণ দ্বীপবাসী, তার মনে রোপন করে লোভ আর স্বার্থপরতার বিষ। সে পাপ করে। ধরা পরে, আর ছিঁড়ে যায় শহরবাসী হুজুরদের মুখোশগুলো। দ্বীপবাসীরা রুখে দাঁড়ায়। না, এই সোনার মাটিকে তারা বিষের কালো জলে ভিজতে দেবে না। সাবধান হয় তারা। কিন্তু তারই মধ্যে আসে চরম অভিঘাত, বিষের জ্বালায় তাদের সাথীটি আত্মহত্যা করে। আর তাতেই ফুঁসে ওঠে তারা। বিদ্রোহ ঘোষণা করে, দুই হুজুরকে নির্বাসিত করা হয় দ্বীপ থেকে।
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে হুজুর দুজন ফিরে আসে বাস্তবের মাটিতে, যে মাটিকে তারা চেনে, শাসন করে, শোষণ করে। খুশি হয়ে ওঠে তারা, আনন্দ পায় প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছে বলে, আর নিশ্চিন্ত হয় এই ভেবে যে, এই মাটি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে না। তারা বছর বছর আরো শুষে যাবে এই দেশের রক্ত, মাংস, অস্থিমজ্জার শেষ বিন্দুটুকু পর্যন্ত তারা চেটে নেবে চরম আশ্লেষে।
সত্যি, এই আমাদের দেশ। আমরা কি পারি না ওই দ্বীপবাসীদের মত রুখে দাঁড়াতে? আমরা কি পারি না চিত্কার করে বলতে- "ওই সুমুদ্দুরির বুকে ঠাই লও গ সইভ্য বাবুরা"? জানি না। হয়ত পারি, হয়ত না। কিন্তু চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি? আর সেই চেতনাই যাতে জাগ্রত হয় সবার মধ্যে, তাই সমাজের এই প্রতিচ্ছবিকে দর্পণ মঞ্চে তুলে ধরল "দুই হুজুর" নাটকটির মাধ্যমে। আশা রইলো আপনারা ভালবাসবেন, আপন করে নেবেন দর্পণের এই প্রয়াসকে।
দর্পণ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: darpan-vashi.webs.com
চিত্র সৌজন্য: প্রীতম চক্রবর্তী, রুদ্রনাথ মুখার্জী (http://rudraznotepad.blogspot.in/), পুনিত দুবে (http://www.punitdubey.in/)
No comments:
Post a Comment