Thursday 25 April 2019

অলীক

বেড়াতে গেছি অর্ধেক পৃথিবী দূরে

মাঠ ঘাট সব অন্যরকম

পাহাড়ে বসতি বানিয়েছিল কারা যেন

সব ছেড়ে গেছে একদিন


ঘুরতে ঘুরতে পুরোনো শহরের বুকে

খুঁজছিলাম হারিয়ে যাওয়া ঋণ

কারা যেন নতুন স্বপ্ন এঁকেছে তার গায়ে

শোধ দেব তার উপায় নেই


এরকমই হারিয়ে যেতে যেতে

হঠাৎ প্রাসাদ এল পথে

সিংহাসনের নিচে বেদী

ছেঁড়াখোঁড়া গালচে পাতা আছে


কেউ যেন ডাকছে আমার নাম

বাড়িয়ে দু হাত ছুটে আসছে

পালাতে পালাতে আমি ক্লান্ত

গলিঘুঁজি খুঁজে হাঁফ ছাড়ি


দেয়ালের সাপ আঁকাবাঁকা

গ্রাস করে ধীরে ধীরে আরো

তলিয়ে যাবার আগে আমি

ডাকি শুধু তোর নাম ধরে


টেনে তোল আমায় এবার

পারছি না ডুবে যেতে আর

স্বপ্ন সত্যি হলে এই

পার হব শেষ পারাবার


Tuesday 12 February 2019

মুখুজ্যে মহিমা: সেই মুখটা

মুখুজ্যেদার বাড়িতে এলে এটাই হয়। একদিন আড্ডা মারব বলে আসা হয়, থেকে যেতে হয় দু-তিনদিন। আড্ডা চলতে থাকে, সাথে খাওয়া দাওয়া তো আছেই। মানে শুক্রবার সন্ধ্যেবেলা এলে রোববারের আগে পাততাড়ি গুটোনোর নাম নেই কারও। মুখুজ্যেদা বলে ওরাও নাকি তাই করত ওদের সিনিয়রদের বাড়ি গেলে। 


কালকের সন্ধ্যের ঐ ঘনঘন কারেন্ট যাওয়ার কারন পরে জানা গেল, কমপ্লেক্সের কোনো একটা ফেজে গোলমাল ছিল, তাই বিদ্যুৎ দপ্তর থেকে লোক এসেছিল মেরামত করতে। তারাই ভুল করে অন্য ফেজ নিভিয়ে ফেলাতে বিভ্রাট ঘটছিল। এটা শুনে সুমন আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। সে যাই হোক গে, ব্যাটা কাল দোপেঁয়াজাটা রেঁধেছিল খাসা। আসলে এই দায়িত্বটা বেশিরভাগ সময়ে আমাকেই নিতে হয়, যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, আমাকেই রান্না করতে হয়। অবশ্য আমার রাঁধতে খারাপ লাগে না। কিন্ত কাল বৌদি আর সুমন ভাগ করে রান্নাটা করে নেওয়ায় আমি পার পেয়ে গেছিলাম। আমরা তাসটা পেড়ে খেলব বলে ভাবছি, মুখুজ্যেদা বলল “ঋষভ, আজ বেশ বৃষ্টি হচ্ছে, কারেন্টটাও বারবার যাচ্ছে, আজ বরং গপ্পোই চলুক। তাস নাহয় কাল খেলা যাবে। কি বলিস?”


বোঝা গেল মুখুজ্যেদা মুডে আছে গল্প বলার। আর কেউ তাস খেলে? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম “এ তো দারুন প্রস্তাব। কিন্ত তোমাকেই শোনাতে হবে। আমার ভান্ডার ঢুঁ ঢুঁ।” মুখুজ্যেদা হাল্কা না না করে রাজি হয়ে গেল। বিনয় আর কি! ইতিমধ্যে মঙ্গল উঠে গিয়ে আরেক রাউন্ড চা করে এনেছে। নাড়ু তাড়াহুড়ো করে খেতে গিয়ে জিভ পুড়িয়েছে। গৌরব হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়েছে। আমি বললাম, “কি গো, শুরু করো।” “হ্যাঁ, এটাও প্রায় বছর পাঁচেক আগের গল্প” মুখুজ্যেদা স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে শুরু করল। 


“আমি তখন সবে চাকরি জয়েন করেছি। প্রথমবার নিজের হাতে সংসার চালাচ্ছি। এতদিন পুরোটাই বাবা মার উপর ছিল, এই প্রথম টাকার হিসেব থেকে কাজের লোকের মাইনে, নিউজপেপার থেকে মাসকাবারি সব করতে হচ্ছে। তবে মন্দ লাগছে না। প্রথম তিনমাস কোম্পানি থাকতে দিয়েছিল, তারপর ফ্ল্যাট দেখে উঠে যেতে হবে। আমি কয়েকদিন খুঁজে পেতে একটা বেশ ভাল ফ্ল্যাট যোগাড় করলাম। বেশ খোলামেলা, পুবের আলোও আছে আবার দক্ষিনের বাতাসও। লিফ্ট আছে, বাড়িওলা ভাল, ঝামেলা করে না। ভাড়াটাও খুব বেশি না।আর কি চাই?”


“শুনে কতকটা এই ফ্ল্যাটটার মতই মনে হচ্ছে, তাই না?” ফুট কাটল নাড়ু। “ঠিক বলেছিস”, মুখুজ্যেদা বলে চলল “তো আমি এসে উঠলাম সেই ফ্ল্যাটে। প্রথম রাতটা ভালই গেল, কোনো অসুবিধে হল না। এত ক্লান্ত ছিলাম জিনিসপত্র বয়ে যে পড়েছি আর মরেছি। পরদিন অফিস গেলাম, ফিরলাম। রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে একটা সিনেমা দেখতে বসলাম। তখন আমার বেলা দশটা থেকে অফিস, সুতরাং শোবার তাড়া নেই। সিনেমাটা তখন প্রায় শেষের পথে, রাত সোয়া বারোটা হবে বোধ হয়, হঠাৎ স্পষ্ট শুনলাম কেউ যেন বেডরুমে হাল্কা কেশে উঠল। আমি বুঝতে পারছি আমার ষষ্ঠেন্দ্রিয় আমাকে সতর্ক করে দিচ্ছে যে কিছু একটা অস্বাভাবিক ঘটছে। গায়ের রোমকূপগুলো জানান দিচ্ছে আমি চরম সজাগ হয়ে পড়েছি। কিন্ত বুঝতে পারছি না উঠব না ওভাবেই বসে থাকব। এই ভাবতে ভাবতে কতক্ষণ পার হয়েছে জানি না, আবার চটকা ভাঙল দ্বিতীয়বারের জন্য কাশির আওয়াজে। না, এভাবে বসে থাকা যাবে না। ল্যাপটপটা গুছিয়ে উঠে হল থেকে বেডরুমে ঢুকলাম। আলো জ্বাললাম। আমার নতুন পাতা চাদর টানটান করা বিছানাতে একটা বড় ফড়িং। দু চারবার হাত নাড়তেই সেটা উড়ে প্রথমে বেড সাইড টেবিল, তারপর টেবিল ল্যাম্প হয়ে জানলা দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি পুরো ফ্ল্যাটটা ভাল করে খুঁটিয়ে দেখে যখন শুতে গেলাম তখন দুটো বাজছে। ঘুম ভাল হল না, স্বপ্ন দেখলাম একটা খোঁড়া বুড়ো লাঠি হাতে কাশতে কাশতে আমার দিকে দৌড়ে আসছে আর আমি বাঁচার জন্যে পালাচ্ছি।”


“এটা সেই বিয়েবাড়ির ভুতের সাথে ক্রশ হয়ে গেছে” নাড়ু বলল। “তাই হবে”, মুখুজ্যেদা আবার শুরু করল “পরের দিন আমি আর চান্স নিই নি। খেয়ে দেয়েই বিছানায়। ভাল ঘুম হওয়া খুব দরকার। আর শোবার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমটা এসেও গেল। ভাঙল আবার একটা অস্বস্তিতে। কেউ যেন আমাকে ডাকছে, অনেক দূর থেকে, কিন্তু স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে। চোখটা খুলতেই জানলার বাইরে চোখ গেল। আজ বোধ হয় অমাবস্যা বা তার পরের দিন। আকাশটা একদম কুচকুচে কালো। কিচ্ছু ঠাহর করতে পারলাম না। একটু চোখ সইতে বুঝলাম বাইরে রাস্তার আলোগুলোও জানি না কেন নিভে গেছে। আস্তে আস্তে চোখ ফিরিয়ে ঘরের ভেতর আনলাম। ঘড়িটা চলছে, দেয়ালে আজ সন্ধ্যেবেলা লাগানো লাদাখের পোস্টারটা আবছা বোঝা যাচ্ছে। পাখাটাও চলছে..... আরে ওটা কি!!!”


“কি হল? কি দেখলে” মুখুজ্যেদার ব্রেকটা একটু লম্বা হতেই মঙ্গল ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সুমন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। বৌদিকে ডাকছে। কিছুতেই একা যাবে না। 


“যেটা দেখলাম সেটা কতটা বলে বোঝাতে পারব জানি না। তবু চেষ্টা করছি। সিলিঙে পাখার দিক থেকে একটু পাশের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম একটা মুখ। অদ্ভুত, বিশ্রী, অপার্থিব একটা মুখ। ব্যস, আর কিছু নেই। শুধু একটা মুখ। সেটাকে মুখ বলার কারন তাতে দুটো চোখ, একটা নাক আর একটা মুখগহ্বর আছে। কিন্ত কোনোটাই মানুষের মুখের মত নয়। চোখগুলো ভয়ানক লাল, বিশাল বড় বড়, পাতা পড়ছে না, সেগুলো দিয়ে যেন কতকালের জিঘাংসা ফুটে বেরোচ্ছে। নাক বলতে শুধু দুটো ফুটো। মুখের কষ দিয়ে লালা ঝরছে। বীভৎস সেই মুখটার জায়গায় জায়গায় ক্ষতের দাগ। অন্ধকার ঘরে কি উপায়ে যেন সেই মুখের উপরে এক চিলতে আবছা আলো এসে পড়েছে। সেই আলোতে আরো বীভৎস হয়ে উঠেছে ঐ মুখ। যেন অন্ধকার থাকলেই ভাল হত, ঐ মুখ দেখতে হত না। মূহুর্তের মধ্যে হাত পা অবশ হয়ে গেল। আর কি এক অদৃশ্য টানে আমার চোখদুটো আটকে রইল ঐ মুখের উপর। অনেক চেষ্টা করেও চোখ সরাতে পারলাম না। হঠাৎ একটা অদ্ভুত শব্দ শুরু হল কোথা থেকে। কেউ যেন গোঙাচ্ছে। গলা টিপে ধরা হয়েছে কারো, আর সে চেষ্টা করছে বাঁচতে, চেঁচিয়ে কাউকে ডাকতে। কিন্তু তার গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না, বেরোচ্ছে ঐ বিশ্রী গোঙানি। আর গোঙানির সাথেই ঐ মুখটা ঘুরতে শুরু করল সিলিঙে। আস্তে আস্তে নেমে আসতে লাগল আমার দিকে। শরীরের সব শক্তি এক জায়গায় এনে আমি প্রাণপনে চেষ্টা করে চলেছি বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে পালাতে কিন্তু কোন এক অশরীরী যেন আমাকে বেঁধে রেখেছে তার অদৃশ্য হাত দিয়ে। মুখটা নামছে ধীরে ধীরে, যখন আর কয়েক হাতের তফাৎ, চলতে থাকা গোঙানিটা স্পষ্ট হয়ে উঠল- “আয়, কাছে আয়, আমায় বাঁচা, আমায় বাঁচা”।


কে কাকে বাঁচাবে! মুখটা তখন আর একটু মাত্র ব্যবধানে। খেয়াল করলাম, মুখটা ভাল করে দেখলে তাতে একটা মানুষের আদল আছে। আর সেটা পরিবর্তিত হচ্ছে, একটা মুখের আদল বদলে তৈরি হচ্ছে অন্য একটা মুখ। এখন ক্ষত বা বিস্ফারিত চোখগুলোকে অগ্রাহ্য করে দেখতে চাইলে ভেতরের আসল মানুষটাকে চেনা যেতে পারে। খুব চেনা চেনা লাগছে না? এ মুখ আমার কোথায় যেন দেখা। ঐ বীভৎস বাহ্যিক কলুষতা ছাড়া এ মুখ আমার ভীষণ চেনা। বাইরে মেঘ করেছে, গুমোট আবহাওয়া, হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠল। আর সাথে সাথেই চিনতে পারলাম মুখটাকে। একে আমি রোজ সকালে দেখি, ঘুম থেকে উঠে, ব্রাশ করতে করতে, আয়নায়। হ্যাঁ, আমার নিজের মুখ! কোনো এক অপার্থিব জাদুবলে ঐ মুখের পেছনে আসলে আমার মুখটাই রয়েছে। কি করে জানি না কিন্ত মনে হচ্ছে যেন আমাকে গ্রাস করতেই ঐ মুখটা আমার মুখের আদলে সেজে নিল!


আমি কাঠ হয়ে পড়ে আছি, দুচোখ ভেসে যাচ্ছে জলে। মনে মনে বুঝতে পারছি এটাই আমার শেষ রাত। কাল ভোরের আলোটা আমার জন্যে ফুটবে না। আমার পরিনতিও হবে ঐ মুখটার মত। নি:শেষ হয়ে যাব আজ রাতে। তারপর অনেকদিন পরে এই ঘরে থাকতে আসা কারো মুখের আদলে সাজবে মুখটা। আমার খোলস ছেড়ে পরবে তার মুখের খোলস। শেষ সময়টা খুব কাছে, হয়ত আর কয়েকটা মিনিট, তারপরে আমার বিলীন হয়ে যাবার চরম মূহুর্তটা আসছে। মৃত্যু কেমন জানি না। কিন্তু হঠাৎ খুব শীত করছে আমার। ধ্রুবনীল মৃত্যু যেন ধেয়ে আসছে দুহাত বাড়িয়ে। সম্মোহিতের মত তাকিয়ে রয়েছি মুখটার দিকে। মুখটা আর মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে।


হঠাৎ জোরে জোরে কলিং বেল বেজে উঠল। মুখটা যেন দাঁড়িয়ে পড়েছে, আর নেমে আসছে না। কিরকম একটা থতমত খাওয়া ভাব। আবার বেল বাজছে। একটু থেমে এবার বেজেই চলল। আমার শক্তি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। নিজেকে কোনোমতে গুটিয়ে যখন বিছানা থেকে নামতে যাচ্ছি লক্ষ্য করলাম মুখটায় একটা অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে, হতাশা, অবজ্ঞা আর ভবিষ্যতের সাবধানবাণী মিশিয়ে সে অভিব্যক্তি যেন আমাকে বলছে “কবার পার পাবে? কাল রাতে দেখে নেব”। ও যেন আশা করে নি এই এত রাতেও আমার বাড়ি কেউ আসতে পারে। 


একছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের দরজায় পৌঁছলাম। দরজাটা খুলতেই সামনে শাশ্বত। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে এবার ওর অবাক হবার পালা। “কি হলরে? ভুত দেখছিস নাকি? আমি রে! ভুলে গেছিস নাকি? তোকে যে পরশু ফোন করেছিলাম, আমি আসব! আমার জয়েনিং কাল! দেখ না.. ফ্লাইটটা এত লেট করল!”


আমি ততক্ষণে ওকে জড়িয়ে ধরেছি। আমাকে বাঁচাল ও। নাহলে এতক্ষণে যে কি হত! ঘুম ছুটে গিয়েছিল, ওকে সব খুলে বললাম। প্রথমে তো ও মানতেই চাইল না, পরে আমার সিরিয়াসনেস আর ফ্যাকাশে মুখ দেখে কিছুটা বিশ্বাস করল। আমি স্হির করে নিলাম এ বাড়িতে আর একটা রাতও নয়। সকাল হতেই অফিস ভুলে নতুন ফ্ল্যাট দেখে অ্যাডভান্স করে চাবি নিয়ে মাল পাঠানোর কাজ শুরু করলাম। বাড়িওয়ালা এরকম ভাড়াটে আগে দেখেনি। শাশ্বতকে মেসেজ করে দিলাম নতুন বাড়ির খবর। বিকেলে যখন নতুন ফ্ল্যাটে ক্লান্তদেহে বসলাম শেষমেশ, স্বস্তির নি:শ্বাস বেরোল একটা।”


  • “সেই ফ্ল্যাটটা কোথায়?” প্রশ্ন করল মঙ্গল।
  • “এটার তিনটে ফ্লোর উপরে”
  • “মানে, একদম ভার্টিকালি তিনটে ফ্লোর উঠলেই সেটা পাওয়া যাবে?” এবার গৌরবের জিজ্ঞাসা।
  • “আজ্ঞে, আর মুখটা কিন্তু নিচের কে নামে!”
  • “কি বলছ! আবার এখানেও এসেছিল নাকি?” সুমনের গলায় স্পষ্ট ভয়।
  • “নাহ্ তা আসে নি। মনে হয় ও ঐ ফ্ল্যাটেই আটকে আছে।”
  • “ওখানে এখন কেউ থাকে না?” আমি প্রশ্ন করলাম।
  • “না। আমার আগেও অনেকদিন খালি ছিল, আর এই ক’বছরেও কেউ আসে নি। আসলে আমি ঐ বাড়িওয়ালাকে এত ঝেড়েছিলাম আর বাজারে কথাটা এত রটে গেছে যে আর কেউ ওখানে থাকার সাহস করে নি”
  • “কিন্ত এটা বললে যে ওটা নিচের দিকে নেমে আসে। তুমি শিওর তো যে ওটা ঐ ফ্ল্যাট থেকে বেরোতে পারে না?” সুমন রীতিমত চিন্তিত।
  • “না রে বাবা। তা নাহলে আমি এখানে থাকতে পারতাম!”


সবাইকে চমকে দিয়ে ঝনঝন করে বেলটা বেজে উঠল। অর্ডার করা স্টার্টারগুলো এসে গেছে।

মুখুজ্যে মহিমা: ভুতুড়ে আড্ডা

মুখুজ্যেদাকে আমরা অনেকদিন থেকে চিনি। সেই এম এস সির সময় থেকে। আমরা হোস্টেলের বস্তাপচা খাবার খেয়ে খেয়ে যখন নাস্তানাবুদ, মুখুজ্যেদা তখন আমাদের বাড়িতে ডেকে ভালমন্দ রান্না করে খাওয়াত। বলত, ওরা যখন হোস্টেলে ছিল, ওরাও নাকি সিনিয়র পাকড়াও অভিযান করে সিনিয়র দাদা দিদিদের বাড়ি গিয়ে শনি রোববার চুটিয়ে মজা করত। 


তা এ হেন মুখুজ্যেদার বাড়ি আমরা গেছিলাম আগের শুক্রবার বিকেলে। হোস্টেল ছেড়েছি বেশ কিছুদিন হল। এখন আমরা সবাই হয় চাকরি, নয় রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত। আগের মত সবার আর একসাথে হয়ে ওঠা হয় না। তাই আগের রোববার যখন মুখুজ্যেদার নেমন্তন্নটা এল, কেউ আর দুবার ভাবেনি। অনেকদিন পর আবার সবাই একসাথে হবার এমন সুযোগ কেউ ছাড়ে নাকি! 


আমরা ঠিক করেছিলাম সবাই একসাথে যাব, সদ্যবিবাহিত মুখুজ্যেদার জন্য একটা কোনো উপহার নিতে হবে। তা সেসব সামলে যখন দাদার বাড়ির নিচে পৌঁছলাম, সন্ধ্যে গড়িয়ে গেছে। অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেল গপ্পো করার, কারণ মুখুজ্যেদা একটা গল্পের ভান্ডার বললে কম বলা হয়। যাক গে, বেশি রাত জেগে সেটা পুষিয়ে নেওয়া যাবেখন। 


ঢুকতেই দেখি বৌদি মুড়ি, চপ, মিষ্টি আর চা নিয়ে রেডি। আমরা বললাম এটা কি করে হল? এই সময়েই আসব জানলে কি করে? ক্লাসিক দেঁতো হাসিটা হেসে জবাব দিল মুখুজ্যেদা। “তোরা তো অনেকক্ষণ ধরে নিচে ঘুরঘুর করছিস দেখলাম। একবার চাদরের দোকান, একবার মিষ্টির দোকান, বুঝলাম আমাদের জন্যেই কিনছিস কিছু। তখন তোদের বৌদিকে বললাম, চলো ততক্ষণ জলখাবার রেডি করা যাক।” এই হল মুখুজ্যেদা।


চা খেতে খেতে নাড়ু কথাটা তুলল। নাড়ু আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকবক করে, আর যেখানে যা ইচ্ছে বকতে পারে। “শোনো মুখুজ্যেদা, অনেকদিন ধরে সেই গপ্পোটা বলবে বলছ, কিন্তু বলছ না। বৌদি তোমায় বলেছে?”

  • “কি?” বৌদির একগাল মাছি
  • “আরে ভুতের গল্প, দাদার নিজের অভিজ্ঞতা”
  • “কই নাতো” বৌদি ঠোঁট বেঁকাচ্ছে। ওর তো যত গপ্পো তোদের সাথে।
  • “আরে না না, আমাদেরও বলে নি।” এবার নাড়ু অপ্রস্তুত।
  • “আচ্ছা বলছি বলছি” এতক্ষণে মুখ খুলেছে মুখুজ্যেদা। “সেটা বছর ছয়েক আগের কথা। আমার এক মাসতুতো দাদার বিয়ে, একটা ছোট রেল শহরের সরকারি কোয়ার্টারে দাদারা থাকত তখন। কোয়ার্টারগুলোর অবস্থা খুব খারাপ, মেন্টেনেন্স নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ লোকজন চলে গেছে বাড়ি করে, কিন্তু কোয়ার্টারগুলোর দরজায় তালা ঝুলিয়ে, কারন সরকার নাকি ওগুলোকে কম পয়সায় মালিকানা হস্তান্তর করবে! সেরকম কয়েকটা কোয়ার্টার মেসোর চেনা লোকের ছিল, মেসো চাবিগুলো চেয়ে রেখেছিল বিয়েতে কাজে লাগবে বলে। তত্ত্ব সাজানো, ন্যাড়াযজ্ঞির খাওয়া এসবের জন্য তাহলে কিছুটা এক্সট্রা জায়গা পাওয়া যাবে। এরকমই একটা ফ্ল্যাটে সেদিন আমরা সারাদিন ধরে তত্ত্ব সাজিয়েছি। দিনটা বিয়ের পরেরদিন। কালরাত্রি, তাই দাদা গেছে বন্ধুর ফ্ল্যাটে শুতে। বৌদি আর তার বাড়ির কয়েকজন মাসিদের সাথে মাসিদের বাড়ি, আর আমরা ভাই বোনেরা ভাগ হয়ে কয়েকটা ওরকম চেয়ে নেওয়া ফ্ল্যাটে। তা যে ফ্ল্যাটে তত্ত্ব সাজানো হচ্ছিল, আমরা সেই ফ্ল্যাটে শুতে গেছি, আমি আর আমার এক ভাই রানা। বেশ রাত হয়ে গেছে, তাই ঘুমও পেয়েছে জব্বর। ঢুকে খেয়াল করলাম, বাইরের ঘরের আলোটা জ্বলছে না। এটা কি হল? সারাদিন তো আমরা আলো জ্বেলেই কাজ করেছি, এখন কি হল? যাক গে, শুতে এসে আলো কি করব? এই ভেবে ঢুকে পড়লাম। বাথরুমে যাব বলে বাইরের ঘর থেকে ভিতরে যাবার দরজাটা খুলতে গিয়ে দেখি দরজাটা কেমন আড়ষ্ট হয়ে আটকে আছে। পুরোপুরি খুলছেও না, আবার পুরোপুরি বন্ধও হচ্ছে না। এতো মহা ঝামেলা। দিনের বেলা তো এসবকিছু হ্যাঙ্গাম ছিল না। কি আর করা যাবে! দরজাটা কোনোমতে ঠেলে বাথরুমে গেলাম। আরে! ওটা কি? সকালে তো ওটাকে দেখিনি! বাথরুমের সিলিঙে একটা চামচিকে ঝুলছে। রানাকে ডেকে জলটল ছুঁড়ে কোনোরকমে ব্যাটাকে জানলা দিয়ে বের করলাম। আলোটা নিভিয়ে বাইরের ঘরের খাটটায় শুতে আসব, দুম করে ফিউজ উড়ে আলোটা কেটে গেল—-“


আর ওমনি ঝপ্ করে লোডশেডিং হয়ে গেল। নবী মুম্বইয়ের এসব দিকে লোডশেডিং হয় না বললেই চলে। তাই গল্পের এরকম একটা জায়গায় অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় সবাই অল্প বিস্তর চমকেছি। গল্পের সাথে সাজুজ্য রেখে লোডশেডিংটা যে নেহাতই কাকতালীয়, বোধহয় সেটা প্রমাণ করতেই গৌরব বলল “আহা থামলে কেন? তারপর কি হল বলবে তো”। মুখুজ্যে বৌদি গুটিসুটি দাদার গা ঘেঁষে বসেছে, সুমন আমাদের মধ্যে একটু বেশি ভিতু, বলল “দাদা, এখন আর ভাল্লাগছে না, তার চেয়ে একটু গানটান হোক”, সঙ্গে সঙ্গে আমি বললাম

  • “বাবুসোনা, তুমি ঐঘরে গিয়ে গান গাও যাও, আমরা এখন গল্পটাই শুনব। তাহলে আর তোমার ভয় লাগবে না।”
  • “বাজে বকিস না। ওসব ভুতটুত কিচ্ছু নেই। যত্তসব গাঁজাখুরি।”
  • “তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন? শোন না”


সুমন ব্যাজার মুখে চুপ করে বসে গেল। মুখুজ্যেদা আবার শুরু করল- “এবার বাথরুমের আলোটা কাটতে আমাদের একটু অস্বস্তি হতে লাগল। যেন কোনোকিছুই যেমন হবার কথা তেমন হচ্ছে না। একটা মন খচখচানির ভাব নিয়ে আমরা মোবাইলের আলোয় বিছানা করে শুয়ে পড়লাম। তারপর গল্প করতে করতে কখন যে তন্দ্রামত এসে গেছে খেয়ালই করি নি। চটকাটা ভাঙল একটা অদ্ভুত শব্দে। আর শব্দটা আসছে ভেতরের ঘরটা থেকে। যেন কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে, অথচ সাধারণ হাঁটা নয়। কারো পায়ে গোলমাল থাকলে যদি সে এক পা ফেলে আর এক পা ঘষে হাঁটে, যেরকম শব্দ হয়, সেরকম। সাথে একটা লাঠির মাটিতে পড়ার শব্দ। স্পষ্ট শুনছি আমি সে আওয়াজ, ঐ তো ঐ ঘরে! শব্দটা ভেতর থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে, দুটো ঘরের মাঝের দরজাটায় এসে থামছে, তারপর আবার ভেতরের দিকে চলে যাচ্ছে। আমি কিছুক্ষণ মন দিয়ে শুনলাম, আগে নিশ্চিত হতে চাইলাম যে আমি যা শুনছি সেটা আমার স্বপ্ন বা কল্পনা নয়, সত্যি। যখন বিশ্বাস হল, আস্তে আস্তে রানাকে ডাকলাম। রানা ঘুমের মধ্যে বলল “ও কিছু না, ঘুমিয়ে পড়।” আমি ওকে জোর করে ধরে বসিয়ে দিলাম। ওর ঘুমটা ছুটে যেতেই ও শুনল শব্দটা, আর শুনেই ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি ফিসফিস করে ওকে বললাম “আওয়াজ করিস না, চোর হতে পারে, হয়তো বিয়েবাড়ি দেখে কোনোফাঁকে ঢুকেছে। আমাদের মাথা ঠান্ডা রেখে বাইরে গিয়ে বাকি লোকজনকে ডাকতে হবে।” চোর ব্যাটা যদি বুঝে যায় আমরা জেগে তাহলে আমাদের ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল, ওদের কাছে ছুরি টুরি থাকে। এই ভেবে আমি খুব সন্তর্পনে মশারিটা তুলেছি বেরাবার জন্যে, আর সেই মূহুর্তে সেই চলমান শব্দ এসে দাঁড়িয়েছে মাঝের দরজার কাছে। যেন শ্বাস পড়ছে সেই অদেখা শরীরটা থেকে, স্পষ্ট টের পাচ্ছি ফ্ল্যাটের মধ্যে তৃতীয় একটা উপস্থিতি। আমার বাড়ানো ডান পাটা আটকে আছে মেঝেতে পড়ার আগে, আর সেই অদৃশ্য শরীরের মালিকও দাঁড়িয়ে পড়েছে কোনো এক অজানা কারনে। পা ঘষে সেই আওয়াজটা আর ভেতরদিকে যাচ্ছে না। যেন অপেক্ষা করছে আমার পরবর্তী পদক্ষেপের। অনন্ত এই বিশ্রী পরীক্ষায় আমারই পরাজয় হল। আমি আমার পা মেঝেতে রাখতেই কি যেন একটা মাড়ালাম। সকালের তত্ত্বের থার্মোকল বা কিছু একটা হবে। আর তাতে শব্দ হল একটু। মূহুর্তের মধ্যে যেন একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল আমার শিরদাঁড়া দিয়ে! কারন দরজার উপরে ততক্ষণে কেউ চাপ দিয়ে দরজাটা আস্তে আস্তে খুলছে, রানা চেঁচিয়ে উঠল “কে কে, কে ওখানে?” আর বলার সাথে সাথেই দরজার উপরে এক মোক্ষম বাড়ি পড়ল, আর পুরো ঘরটা ভরে উঠল একটা অপার্থিব হাসিতে। বুড়োমানুষের গলার হাসি, খুনখনে অথচ তীব্র। দরজাটা ফাঁক হয়ে একটা ছায়ামূর্তির আদল, ঘোলাটে কিন্ত চরম সে উপস্থিতি! আমরা কোনোক্রমে মশারি টশারি ছিঁড়ে বেরিয়ে বাইরের দরজা খুলে বেরিয়েই আবার দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছি। আর প্রাণপনে ডাকছি “দাদা, মেসো, তাড়াতাড়ি এসো। চোর চোর।”


আর চোর! সবাই দৌড়ে এল, টর্চ জ্বেলে ভেতরে ঢুকে সুইচ দিতেই আলো জ্বলল। আমরা অবাক। সমানে বলে গেলাম যে আমরা হাজার চেষ্টা করেও আলো জ্বালাতে পারিনি। বাথরুমেও আলো জ্বলল। দুই ঘরের মাঝের দরজাটাও কি এক অজ্ঞাত কারনে এখন স্বাভাবিকভাবে খুলল আর বন্ধ হল। প্রমাণ হয়ে গেল আমরা দুই ভীতুর ডিম বিয়েতে গুরুপাক খেয়ে পেট গরম বাধিয়ে স্বপ্ন দেখেছি।”


ইতিমধ্যে কারেন্ট এসে গেছে। সুমন বোধহয় সবথেকে বেশি খুশি হয়েছে ভুত না হয়ে স্বপ্নের গল্প শুনে। আমরা বলা বাহুল্য হতাশ। আমি বললাম “এই তোমার ভুতের গল্প?” মুখুজ্যেদা দেখি মুখ টিপে টিপে হাসছে।আবার বললাম “বলো না, এখানেই শেষ?”

  • “আমি কি তাই বলেছি?”
  • “ও তাই? তাহলে থামলে কেন? বলো বলো”


চা মুড়ি ততক্ষণে শেষ। একটা সিগারেট ধরিয়ে বেশ আয়েস করে ধোঁয়া ছেড়ে মুখুজ্যেদা বলল “আমরা ভীতু হই আর যাই হই, বলে দিলাম আর ওঘরে শোব না। বাকি রাতটা আমাদের অন্য কোথাও জায়গা দিতে হবে। অগত্যা দাদা যে বন্ধুর বাড়ি শুয়েছিল সেখানেই আমাদের বিছানা হল চেপেচুপে। কিছুক্ষণ পরে যখন ঘুম এসেছে, শুনলাম দাদা আর দাদার বন্ধু বাবলুদা চাপাস্বরে কথা বলছে। আমি মটকা মেরে শুনলাম পুরোটা। যে ফ্ল্যাটে আমাদের শুতে দেওয়া হয়েছিল সেখানে এক বয়স্ক ভদ্রলোক থাকতেন। তাঁর এক পায়ে গোলমাল ছিল তাই লাঠি নিয়ে হাঁটতেন পা ঘষে ঘষে। তিনি একাই থাকতেন, এক ছেলে, বাবাকে দেখত না। একা ফেলে চলে গেছিল বাইরে। বুড়ো তন্ত্রমন্ত্র জানতেন। ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে অনেকে অনেক রকম আওয়াজ পেত, মন্ত্রোচ্চারনের, যজ্ঞের, অট্টহাসির। কিন্ত কেউ কোনোদিন সাহস করেনি বুড়োকে ঘাঁটাবার। কেউ খুব একটা মাথাও ঘামাত না বুড়ো আছে না নেই। একদিন হঠাৎ খুব বাজে গন্ধ বেরোতে লোকে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে বুড়োর লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়, কতদিন আগে মারা গেছেন সে নিয়ে পুলিশের ডাক্তার বলে  দেখে মনে হচ্ছে দু-তিনদিন। অথচ পরে পোস্টমর্টেমে জানা যায় মৃতদেহটি কমপক্ষে তিন সপ্তাহ ওভাবে পড়েছিল। কি উপায়ে মানবশরীরের পচন বিলম্বিত হল, সেটা আজও উদ্ধার করা যায় নি। তারপর বুড়োর ছেলে এসে যাবতীয় আইনি ঝামেলা পেরিয়ে ফ্ল্যাটটার আবার দখল নেয় আর নিজের শালার পরিবারকে ওখানে থাকতে দেয়। কিন্ত দুদিন পর তারাও তালা বন্ধ করে চলে যায়। আগেরবার পুজোর সময় ওখানে ঢাকিদের থাকতে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা এক রাত্তিরের বেশি ওখানে থাকতে পারে নি। 


এতটা শুনেই আমি লাফিয়ে উঠেছি। “তোরা সব জেনেশুনে আমাদের ওখানে শুতে পাঠিয়েছিলি?” দাদা আর বাবলুদা দুজনেই অপ্রস্তুত। আমতা আমতা করে বলল “আমরা ভেবেছিলাম এসব গাঁজাখুরি। আজকালকার দিনে আবার ভুতটুত হয় নাকি!” আমি তো দাদাকে এই মারি তো সেই মারি। “তোদের সন্দেহ তাহলে তোরা ওখানে শুতিস।” যাক গে, সেসব শেষ করে যখন দুচোখের পাতা এক করছি তখন প্রায় ভোর হয় হয়!”


ঘরে সূচ পড়লে শব্দ পাব। সবাই প্রায় তটস্থ। মুখুজ্যেদাই নৈ:শব্দ ভাঙল। “এবার ওঠ সব, চল রান্নার যোগাড়যন্ত্র করা যাক।” সুমনের এতক্ষণে একটু ভয়টা গেছে মনে হল। উঠে বলল, “হ্যাঁ চলো, যত্তসব ভুলভাল গপ্পো। আজ আমি রান্না করব। দোপেঁয়াজা। বৌদি, আমাকে মশলাগুলো বের করে দাওতো”। বলে যেই ও রান্নাঘরে ঢুকেছে, আবার লোডশেডিং! সাথে সাথেই একটা বিচ্ছিরি গলায় হেসে উঠল মঙ্গল। আর রান্নাঘর থেকে “ওরে বাবারে, গেছিরে” বলে দৌড়ে বেরিয়ে এল সুমন।


মুখুজ্যেদার ফ্ল্যাটের হলে তখন হাসির ফোয়ারা।