Tuesday 21 September 2010

পুজো আসছে

পঞ্চমীতে পাঁচমিশেলি,
ষষ্ঠী বোধন দিন,
সপ্তমী সপ্তম স্বর্গের-
অষ্টমী রঙ্গিন
নবমীতে আমিষ ভোজন,
প্প্লিজ, কটা দিন আর,
থাকতে কেন পারো না মা,
এইটা বোঝা ভার!
পরের দিনই যাবে মাগো-
চলে যে কৈলাসে,
তবু, বিদায়বেলায় পরের বারের,
আগমনীই ভাসে....

আপনার প্রতি

সেদিনটা আজও মনে আছে,
তখনও ভাল করে বুদ্ধি হয়নি,
আপনার নাম করে মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “কে উনি?”


মা বলেছিলেন,ঠাকুর


হাজার হাজার হিন্দু দেব দেবীদের মধ্যে থেকে আলাদা করতে পারিনি আপনাকে
ভেবেছিলাম আপনিও তাদের একজন
তাইতো প্রথম পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়,
ঠাকুমার উপদেশ মত সব ঠাকুরের ছবিতে প্রনাম করেছিলাম,
আপনার ছবিটাকেও বাদ দিইনি
ধূপ জ্বেলে, ফুল দিয়ে জোড় হাতে চোখ বন্ধ করে কত কী বলেছিলাম
অবুঝ মনের সে অবোধ প্রার্থনা আজ আর মনে পড়ে না
তখনও পট আর ফোটোর মধ্যে পার্থক্য করতে শিখিনি,
তাই অনায়াসে সবাইকে বলেছি, তোদের কারুর ঘরে যা নেই, আমার ঘরে সেই ঠাকুর আছে
অনেকে হেসেছে, বুঝিনি কেন!
আজও বুঝি না


ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় উৎসব হত, বছরের দুটো নির্দিষ্ট দিনে;
আপনার ছবি রেখে সে উৎসবে নাচ হত, গান হত, আবৃত্তি, নাটক, কত কী!
মনে হত কী ভাল, আপনাকে ভাল লাগার আরেকটা কারন বোধ হয় সেটা
কবে যে মনে মনে ভালবেসেছি, জানি না
মা যখন অনুমতি দিলেন, কিছু বড় হওয়ার পর,
আমিও যোগ দিতাম সেই উৎসবে, উঃ কী রোমাঞ্চ
পরে, অনেক পরে জানলাম, আপনি মানুষ, আমদেরই মত
আপনারও জীবন ছিল, ভাই ছিল, মা ছিল, আমদেরই মত
ভীষণ অবাক লেগেছিল সেদিন,
কিন্তু বিশ্বাস করুন, এক মুহুর্তের জন্যও আপনাকে সিংহাসন থেকে সরাতে পারিনি
মনে হত আপনি সত্যিই লৌকিক নন, আপনি দেবপ্রাণ


আমার ঠাকুর্দার অন্যত্র প্রেম ছিল,
ঠাকুমা সুখ পান নি কখনও
কষ্টের সাথে নিজের ভাগ্যকে বেঁধে ফেলেছিলেন বেশ শক্তভাবেই
বাবা চাকরি পেতে সে বাঁধন কিছুটা শিথিল হয়েছিল
কিন্তু বাবার বদলির চাকরি,
ঠাকুমা আবার একা,
অন্তরে বাইরে
বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ত, আর-
ঠাকুমা সেদিকে চেয়ে বসে থাকতেন,
আমি তাঁর কোলে বসা
ঠাকুমা গাইতেন – “দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না
গাইতেন আর তাঁর মনের মেঘ চোখ বেয়ে নেমে আসত বর্ষার সাথে,
অবিরল


সেদিনও প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছিল,
আষাঢ়ের সন্ধ্যায় বাবা এলেন,
স্তব্ধ, নিঃশব্দ
কয়েক ঘন্টা আগেই ঠাকুমা চলে গেছেন-
দেখা হয়নি
শবযাত্রীর দল যখন কীর্তনীয়াদের নিয়ে হরিধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছিল-
আমার গা পুড়ে যাচ্ছিল জ্বরে,
আমার জমাট বাঁধা বুক ফাটিয়ে উঠে আসছিল সেই গানটাই-
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না…”
কত দিন চলে গেছে,
তারপর কত ঘটনার ধূলিজালে ঢাকা পরে গেছে সংসার
তবু ঠাকুমার কথায়, গানে আজও আপনি মনে আসেন
আপনার ব্যক্তিত্বের চ্ছটায়, আপনার অমলীন সৌন্দর্যে
আজ আমি আবৃত
তাই আপনাকে আমার বিনম্র নমস্কার,
আপনি গ্রহন করুন,
আপনি আশ্রয় দিন আমায়, আপনার বিমূর্ত ব্যঞ্জনায়,
রবীন্দ্রনাথ